
ছবি: সংগৃহীত।
রান্নাঘর কিংবা দুর্ঘটনায় আগুনে পোড়া একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা। অনেকেই ভুল করে সঙ্গে সঙ্গে পোড়া জায়গায় বরফ প্রয়োগ করেন, যা বরং ক্ষতির কারণ হতে পারে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পোড়াজনিত কারণে মারা যান। এর মধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ঘটে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার শিশু মাঝারি বা গুরুতর পোড়ার শিকার হয়। তাদের মধ্যে ১৭% ভোগে অস্থায়ী এবং ১৮% ভোগে স্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতায়।
কেন বরফ নয়?
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়, পোড়া স্থানে বরফ দেওয়ার ফলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, যা ওই অংশের টিস্যুকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একে বলা হয় "কোল্ড ইনডিউসড ইনজুরি"। বরফের অতিরিক্ত ঠান্ডায় ত্বকের নিচের স্নায়ু আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বরফ ঘষে দিলে চামড়ায় ফাটল ধরার সম্ভাবনা বাড়ে, যার ফলে ইনফেকশনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
কী করবো?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও ব্রিটিশ বার্ন অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী, পোড়া জায়গায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে সরাসরি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করাই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ উপায়। এই ঠান্ডা পানি ব্যথা কমায়, চামড়া ঠান্ডা করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ফলে ক্ষত নিরাময় দ্রুত হয়।
পোড়া স্থানে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে, একটি পরিষ্কার কাপড়ে ঢেকে দিতে হবে। কোনও অবস্থাতেই বরফ, ঠান্ডা জেল, টুথপেস্ট বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি ক্ষত গুরুতর হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
মনে রাখবেন:
-
পোড়া অংশে বরফ নয়, দিন ঠান্ডা পানি
-
ফাটা চামড়া টানা যাবে না
-
পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন
-
বড়দের ১৫% ও শিশুদের ১০% শরীর পুড়লে তা ঝুঁকিপূর্ণ
আগুনে পোড়া একটি জরুরি অবস্থা। তাই সঠিক সময়ে, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রাণ বাঁচাতে পারে।
নুসরাত