
ছবি: সংগৃহীত
গরমে ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ঘাম অস্বস্তিকর হতে পারে এবং এর থেকে ঘামাচি বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘামের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করতে পারেন:
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন
-
পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরকে শীতল রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের শরবত, ডাবের পানি বা ওরস্যালাইন পান করুন। শরীর থেকে ঘামের সাথে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়, তাই পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ জরুরি।
-
হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক: গরমে সুতি বা প্রাকৃতিক ফাইবারের তৈরি হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এগুলো বাতাস চলাচল সহজ করে এবং ঘাম দ্রুত শোষণ করে। নাইলন বা পলিয়েস্টারের মতো সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন।
-
নিয়মিত গোসল: দিনে অন্তত একবার গোসল করুন, সম্ভব হলে দুইবার। এটি শরীরকে পরিষ্কার ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘামের কারণে ব্যাকটেরিয়া জমা হওয়া রোধ করে। গোসলের পর শরীর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঘামে ভেজা পোশাক দ্রুত পরিবর্তন করুন। একই কাপড় এই গরমে দুবার পরা উচিত নয়। অন্তর্বাসও নিয়মিত পরিবর্তন করুন। ঘামাচি হলে ভুলেও নখ দিয়ে চুলকাবেন না।
-
ঠান্ডা রাখুন পরিবেশ: আপনার ঘর বা কাজের জায়গা যথাসম্ভব ঠান্ডা ও বাতাস চলাচলকারী রাখুন। ফ্যান বা এসি ব্যবহার করলে ঘাম কম হবে।
খাদ্যাভ্যাস ও পানীয়
-
মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার বেশি ঘাম উৎপন্ন করতে পারে, তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন।
-
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার: চা, কফি এবং অ্যালকোহল অতিরিক্ত ঘাম বাড়াতে পারে, তাই এগুলো পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন বা এড়িয়ে চলুন।
-
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার: কলা, ডিম, দুধ, গাজর, টমেটো, সবুজ শাক, মাছ, কাঠ বাদাম ইত্যাদি ভিটামিন বি পরিবারভুক্ত খাবার ঘাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন বি ট্যাবলেটও গ্রহণ করতে পারেন।
কিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
-
বেকিং সোডা: পরিমাণমতো পানির সঙ্গে ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। ঘাম হয় এমন জায়গায় (যেমন: বগল) লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক ঘাম শোষক হিসেবে কাজ করে।
-
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: রাতে ঘুমানোর আগে বেশি ঘাম হওয়া স্থানে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার তুলার বলে লাগিয়ে রাখুন। সকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী।
-
লাল চা: লাল চায়ে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড ঘাম প্রতিরোধ করতে পারে। ৩-৪ কাপ গরম পানিতে ১-২টি টি-ব্যাগ ভিজিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এই পানিতে কাপড় ভিজিয়ে বগল বা অন্যান্য ঘামা স্থানে লাগান। হাত-পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পানিতে ২০-৩০ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
-
চন্দন: চন্দন বাটা বা চন্দন গুঁড়া গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির স্থানে লাগালে আরাম পাবেন এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে।
-
টমেটোর রস: টমেটোতে থাকা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ঘাম গ্রন্থিকে সংকুচিত করে। প্রতিদিন এক কাপ তাজা টমেটোর রস পান করা বা ঘাম হয় এমন স্থানে টমেটোর রস লাগানো উপকার দিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি ওপরের পরামর্শগুলো মেনে চলার পরও আপনার অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকে, তাহলে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ বা হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, অতিরিক্ত ঘাম থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা বা অন্যান্য অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি গরমে ঘামের যন্ত্রণা অনেকটাই কমাতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।
সাব্বির