ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

বয়স বাড়লেও হবেন আরো আকর্ষণীয়! এই ৯টি অভ্যাস মেনে চলুন প্রতিদিন

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৪, ২৩ জুলাই ২০২৫

বয়স বাড়লেও হবেন আরো আকর্ষণীয়! এই ৯টি অভ্যাস মেনে চলুন প্রতিদিন

ছবিঃ সংগৃহীত

অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন আরও উজ্জ্বল, আত্মবিশ্বাসী ও মুগ্ধকর হয়ে ওঠেন। তাদের দেখে বোঝাই যায় না যে তারা বয়সের সঙ্গে লড়াই করছেন—বরং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তারা নিজেদের সৌন্দর্যকে এক নতুন রূপে ফুটিয়ে তুলছেন।

এই মানুষদের অভ্যাসগুলো লক্ষ করে দেখা গেছে, তারা কিছু নির্দিষ্ট দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করেন যা ত্বক, মন এবং শরীর—সবকিছুকে দীর্ঘমেয়াদে সুন্দর রাখে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী সেই ৯টি অভ্যাস:

১. তারা পানি পান করেন যেমনটা কেউ কাজ করে—অর্থপূর্ণভাবে
তারা শুধু পানি পান করেই ক্ষান্ত হন না—তারা পানিকে একটি আনন্দের অভ্যাসে পরিণত করেছেন। কেউ সকালে "বিউটি ওয়াটার" তৈরি করেন: লেবু, পিঙ্ক সল্ট ও মাঝে মাঝে ক্লোরোফিল দিয়ে বানানো পানি। আবার কেউ পানির বোতলে যোগ করেন শসা, পুদিনা বা বেরি।

হাইড্রেশন তাদের কাছে একটা সচেতন রুটিন, শুধু পিপাসা মেটানোর বিষয় নয়। তারা জানেন, পানি ত্বকের নমনীয়তা বাড়ায়, শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং জয়েন্টকে সুস্থ রাখে।

২. তারা শরীরচর্চা করেন আনন্দের জন্য, শাস্তি হিসেবে নয়
এই মানুষগুলো “ওয়ার্কআউট” শব্দটিকে খুব গুরুত্ব দেন না। বরং তারা নাচেন, হাঁটেন, খেলাধুলা করেন—যা কিছু তাদের শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। প্রতিদিন শরীর কী চাইছে, সেটার ওপর নির্ভর করে তারা চলাফেরা করেন।

তারা জানেন—নিয়মিত মুভমেন্ট, যেটা উপভোগ করা যায়, সেটাই দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মন ভালো রাখে।

৩. তারা খাওয়াকে দেখেন বন্ধুকে খাওয়ানোর মতো
তারা ডায়েট মানেন না, বরং শরীরকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ভালোবাসেন। তারা প্লান্ট-বেইসড ডায়েটের প্রতি আগ্রহী—কিন্তু কঠোর নিয়মে আবদ্ধ নন। তাদের খাবারে থাকে মৌলিক উপাদান, অনেকেই ফার্মার্স মার্কেট থেকে তাজা সবজি কিনে নিজে রান্না করেন বা ফার্মেন্ট করা খাবার তৈরি করেন।

তারা ফোন ছাড়াই ধীরে ধীরে খাওয়া পছন্দ করেন এবং খাবারের রঙ, গন্ধ ও স্বাদের প্রশংসা করেন।

৪. তারা ত্বককে যত্ন নেন একে শিল্পকর্ম মনে করে
যাদের বয়সের সঙ্গে সৌন্দর্য আরও বাড়ছে, তারা ত্বকের যত্নে জটিল কিছু করেন না। সাধারণভাবে—একটি হালকা ক্লেনজার, ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং নিয়মিত সানস্ক্রিনই তাদের ত্বক রক্ষার মূল অস্ত্র।

তারা জানেন, সানড্যামেজ একবার হলে তা মুছে ফেলা কঠিন। তাই তারা নিয়মিত স্কিনকেয়ারে মন দেন, বিছানায় যাওয়ার আগে মেকআপ তুলে ফেলেন এবং বালিশের কভার পরিবর্তন করতেও ভুল করেন না।

৫. তারা ঘুমকে দেখেন পবিত্র কিছু হিসেবে
যেখানে অনেকেই ৪ ঘণ্টার ঘুম নিয়ে গর্ব করেন, সেখানে এই মানুষগুলো গভীর ও পরিপূর্ণ ঘুমকে প্রাধান্য দেন। তারা স্ক্রিনহীন ঘুমের পরিবেশ তৈরি করেন, আলো কমিয়ে দেন, হালকা গরম পানীয় খান এবং কখনো কখনো ধ্যান বা স্ট্রেচিং করেন।

তারা বুঝেছেন, সুন্দর ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়—এটি দীর্ঘমেয়াদি সৌন্দর্যের এক গোপন চাবিকাঠি।

৬. তারা স্ট্রেস ম্যানেজ করেন অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি দিয়ে
তারা শুধু মাঝে মাঝে মেডিটেশন করেন না—তারা জীবনযাপনেই শান্তি আনেন। তারা না বলতে শেখেন, সীমা নির্ধারণ করেন এবং দিনের শুরুতেই নিজের সময় রাখেন।

তাদের কাছে প্রতিদিনের ক্ষুদ্র বিরক্তিকর মুহূর্তগুলোকেও রূপ দেওয়া যায় আনন্দময় অভিজ্ঞতায়। তারা জানেন, মানসিক শান্তি শরীর ও ত্বকে সরাসরি প্রতিফলিত হয়।

৭. তারা সবসময় নতুন কিছু শিখতে চান
বয়স যাই হোক না কেন, তারা জিজ্ঞাসু মন নিয়ে বাঁচেন। ৬০ বছরেও তারা পটারি শিখছেন, ৭০-এ নতুন ভাষা রপ্ত করছেন, টিকটকে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন।

এই উদ্দীপনা তাদের মনের ও চেহারার যৌবন ধরে রাখে। তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যান এবং বয়সকে একটি আকর্ষণীয় অভিযাত্রা হিসেবে দেখেন।

৮. তারা সম্পর্ককে ভালোবাসার খোরাক হিসেবে গড়ে তোলেন
তারা শুধু এক বয়সী মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান না—সব বয়সের মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখেন। তারা সম্পর্কের গুণগত মানকে গুরুত্ব দেন, শুধু পরিমাণ নয়।

তাদের একাকিত্বও মধুর। তারা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে জানেন, নিজের সঙ্গেই একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন—এবং সেটাই তাদের আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।

৯. তারা কৃতজ্ঞতাকে করেন জীবনের অংশ
তারা প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তে সৌন্দর্য খুঁজে পান—সকালবেলার আলো, ঘরে বানানো কম্বুচার গন্ধ, প্রিয় গান শোনা। তাদের কৃতজ্ঞতা কোনো সাজানো ইন্সটাগ্রাম পোস্ট নয়—এটা তাদের জীবনবোধের অংশ।

তারা ভালো-খারাপ দুটোকেই আলিঙ্গন করেন, কারণ সেটাই একটি পরিপূর্ণ জীবনের চিহ্ন।


বয়স বাড়লে আরও সুন্দর হয়ে ওঠা কোনো জাদুবিদ্যা নয়—এটা একটি সচেতন, আনন্দময় এবং যত্নশীল জীবনযাত্রার ফল। এই ৯টি অভ্যাস বয়সের সাথে সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে এবং সময়ের সাথে সাথে আপনাকে করে আরও আত্মবিশ্বাসী, উজ্জ্বল ও জীবন্ত।

আজ থেকেই যেকোনো বয়সে আপনি শুরু করতে পারেন। কারণ নিজের বয়সকে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করা—এটাই হতে পারে আত্ম-ভালবাসার সবচেয়ে সাহসী কাজ।
 

 
 

মারিয়া

×