ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

চিন্তা আর রাগের ফলাফল হয় ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’!

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৩ জুলাই ২০২৫

চিন্তা আর রাগের ফলাফল হয় ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’!

ছ‌বি: প্রতীকী

আমরা অনেকেই জানি হার্ট অ্যাটাক মানেই বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, ঘাম, বুক ধড়ফড়ানি বা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। কিন্তু সব সময় তা নয়। কখনো কখনো হার্ট অ্যাটাক হয় একদম চুপচাপভাবে, কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ ছাড়াই। একে বলা হয় ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এমন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে আমাদের হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় নিয়মিত চেকআপ বা ইসিজি করাতে গিয়ে পুরোনো হার্ট অ্যাটাকের চিহ্ন ধরা পড়ে। আর এমন নীরব হার্ট অ্যাটাকের পেছনে যে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে, তা হলো—চিন্তা আর রাগ।

আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানুষ প্রতিনিয়ত মানসিক চাপে থাকছে। পরিবার, অফিস, আর্থিক সমস্যা, সামাজিক দায়বদ্ধতা—সবকিছু মিলিয়ে অনেকেই মনের ভেতরে অস্থিরতা আর চাপ অনুভব করে। এই মানসিক চাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে তা শরীরেও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে হার্ট বা হৃদযন্ত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যখন চিন্তায় ডুবে থাকি, তখন শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কোর্টিসল নামের একটি স্ট্রেস হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় নিঃসৃত হয়, যা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে তোলে। এতে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

অন্যদিকে রাগ বা ক্ষোভও হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রেগে গেলে শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলে। এতে হঠাৎ করেই হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এই রক্তসরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হার্টের টিস্যু মারা যেতে থাকে, কিন্তু ব্যক্তি তা টের পান না। যখন বুঝতে পারেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক সাধারণত বেশি হয় ডায়াবেটিক রোগীদের, প্রবীণদের এবং এমন মানুষদের যাদের হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, তরুণরাও এতে আক্রান্ত হচ্ছে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় স্ট্রেসে থাকে বা খুব সহজে রেগে যায়। তারা দিনের পর দিন চিন্তা আর রাগকে নিজের সঙ্গী করে নেয়, কিন্তু জানে না এই অভ্যাস তাদের হৃদযন্ত্রকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ খুব সূক্ষ্ম হয়। হালকা ক্লান্তি, বুকের মাঝখানে চাপ লাগা, পিঠে বা চোয়ালে অস্বস্তি, হঠাৎ করে ঘাম হওয়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এগুলোর কোনোটাই আমরা সাধারণত হার্ট অ্যাটাক হিসেবে ভাবি না। ফলে চিকিৎসা নেওয়াও হয় না। এইভাবে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।

চিন্তা আর রাগ দুইটাই নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। জীবনযাপন যতই ব্যস্ত হোক না কেন, কিছুটা সময় নিজের মানসিক প্রশান্তির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশন, প্রার্থনা, বা মন শান্ত রাখার অনুশীলন করা দরকার। ভালো ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কারো ওপর রাগ হলে তা ধীরে প্রকাশ না করে, ভেতরে পুষে রাখলে ক্ষতি আরও বেশি হয়। তাই সমস্যা থাকলে তা খোলাখুলি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।

সবচেয়ে জরুরি হলো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। বিশেষ করে যাদের পরিবারে আগে কেউ হার্টের রোগে ভুগেছেন বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের বছরে একবার হলেও ইসিজি, ইকো এবং ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বোঝার উপায় একমাত্র পরীক্ষাই।

স্মরণ রাখতে হবে, আমাদের মন যেমন, শরীরও তেমন। চিন্তা ও রাগ শুধু মনের ক্ষতি করে না, শরীরকেও ধ্বংস করে। আর হৃদয় যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন জীবন হুমকির মুখে পড়ে। তাই আজ থেকেই শুরু হোক সচেতনতা, হোক নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস। মনে রাখতে হবে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নিঃশব্দে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে— তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকাই শ্রেয়।

এম.কে.

×