
ছবি: প্রতীকী
ফুসফুস আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করি। কিন্তু দূষণ, ধূমপান, ধুলাবালি, এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন আমাদের ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কাশি, এমনকি মারাত্মক ফুসফুসজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে হলে আমাদের নিয়মিত কিছু শ্বাসব্যায়াম করা উচিত। এতে শুধু ফুসফুস পরিষ্কার থাকে না, বরং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং দেহ-মন সতেজ থাকে।
প্রথম যে ব্যায়ামটি করা যেতে পারে, সেটি হলো দীপ শ্বাস বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন। এটি খুবই সহজ এবং ঘরে বসেই করা যায়। সোজা হয়ে বসে নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে এবং তা ৪-৫ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। তারপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট প্রতিদিন করলে ফুসফুসে জমে থাকা দূষিত বায়ু ধীরে ধীরে বেরিয়ে যেতে থাকে। এই ব্যায়ামে ফুসফুসে আরও বেশি অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে এবং শরীরে প্রশান্তি আসে।
দ্বিতীয় ব্যায়ামটি হলো ঠোঁট ছিদ্র করে শ্বাস ছাড়ার অনুশীলন বা ‘পার্সড লিপ ব্রিদিং’। এই ব্যায়াম মূলত যারা ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য খুবই কার্যকর। তবে সাধারণ মানুষের জন্যও এটি খুব উপকারী। প্রথমে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে, তারপর ঠোঁট অল্প ফাঁক করে, যেন শিস বাজানোর মতো, ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই ব্যায়ামে ফুসফুস থেকে অতিরিক্ত বাতাস বের হয়ে যায় এবং ফুসফুসের ভেতরকার চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি নিয়মিত করলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়, হাঁটার সময় বা সিঁড়ি ভাঙার সময় হাঁপ ধরার প্রবণতা কমে যায়। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা বা সিওপিডি আছে, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারি।
তৃতীয় ব্যায়ামটি হলো বেলুন ফোলানোর ব্যায়াম। এটি দেখতে যেমন সহজ, তেমনি কার্যকর। একটি সাধারণ বেলুন নিয়ে দিনে ৩ থেকে ৫ বার ফোলানোর চেষ্টা করুন। এতে ফুসফুসের পেশিগুলো শক্তিশালী হয় এবং ফুসফুস বেশি কার্যকরভাবে কাজ করতে শেখে। যারা নিয়মিত বেলুন ফোলানোর মতো ব্যায়াম করেন, তাদের ফুসফুসে বাতাস ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ে এবং দূষিত বায়ু সহজেই বাইরে বেরিয়ে যায়। এই ব্যায়ামটি শিশুদের জন্যও উপযোগী, কারণ এটি খেলার ছলে করা যায় এবং এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সচেতনতা গড়ে ওঠে।
এই তিনটি শ্বাসব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর প্রাণবন্ত থাকে। বিশেষ করে যারা শহরে থাকেন, যেখানে বায়ুদূষণ বেশি, তাদের জন্য এগুলো খুবই জরুরি। এছাড়াও যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করছেন বা কখনো ধূমপায়ী ছিলেন, তাদের ফুসফুস পরিষ্কার করতে এই ব্যায়ামগুলো অনেক সাহায্য করে।
শ্বাসব্যায়াম করার সময় অবশ্যই নিরিবিলি জায়গা বেছে নিতে হবে। সকালবেলা খালি পেটে বা হালকা কিছু খাওয়ার পর করা ভালো। ঘরের জানালা খুলে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা রেখে ব্যায়াম করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে যাদের আগে থেকেই ফুসফুসের জটিল সমস্যা আছে, যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি, বা অন্য শ্বাসজনিত সমস্যা, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করবেন।
ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না, জীবনযাপনেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন ধূমপান একেবারে বন্ধ করতে হবে, ধুলাবালু এড়িয়ে চলতে হবে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এছাড়া বেশি বেশি পানি পান করতে হবে যাতে শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান সহজেই বেরিয়ে যায়।
অতএব, সুস্থ ফুসফুস মানেই সুস্থ জীবন। প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় ব্যয় করে যদি এই শ্বাসব্যায়ামগুলো অভ্যাসে পরিণত করা যায়, তাহলে দীর্ঘদিন ফুসফুস সুস্থ রাখা সম্ভব হবে। দেহ-মন দুটোই থাকবে চাঙ্গা, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং জীবনের গতি হবে আরও শক্তিশালী ও আনন্দময়।
এম.কে.