ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

পেটে গ্যাস, ফাঁপা বা অস্বস্তি? হতে পারে হেলিকোব্যাক্টার সংক্রমণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৩ জুলাই ২০২৫

পেটে গ্যাস, ফাঁপা বা অস্বস্তি? হতে পারে হেলিকোব্যাক্টার সংক্রমণ

ছ‌বি: প্রতীকী

পেটে গ্যাস, ফাঁপা বা অস্বস্তি প্রায়ই হালকাভাবে নেওয়া হয়। অনেকেই ভাবেন, একটু বদহজম বা বেশি খাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু বারবার এই সমস্যা হলে এটি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (Helicobacter pylori) নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াটি অনেক সময় দীর্ঘদিন পেটে লুকিয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে।

হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি বা এইচ. পাইলোরি একটি স্পাইরাল আকৃতির ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষের পাকস্থলীর মিউকাস স্তরে বসবাস করে। এটি পাকস্থলীতে টিকে থাকতে পারে এবং ধীরে ধীরে সেখানে প্রদাহ তৈরি করে। এই সংক্রমণ সাধারণত মুখের মাধ্যমে ছড়ায়। অপরিষ্কার খাবার, অপরিচ্ছন্ন হাত কিংবা দূষিত পানি থেকে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এই সংক্রমণের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো পেটে গ্যাসের সমস্যা। কেউ কেউ বলেন, "পেটটা যেন ফুলে আছে", আবার কেউ বলেন, "সব সময় অস্বস্তি লাগে"। অনেক সময় একটু খাওয়ার পরেই পেট ভরা ভরা লাগে বা হালকা ব্যথা অনুভব হয়। মাঝে মাঝে পেটে পুড়াপুড়ি ভাব বা বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। ভরপেট খাবার না খেয়েও পেট ভর্তি মনে হয়, অথবা বারবার ঢেঁকুর ওঠে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

এইচ. পাইলোরি সংক্রমণ দীর্ঘদিন untreated থাকলে তা গ্যাস্ট্রিক আলসার, পাকস্থলীর ক্ষত বা এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, এই সংক্রমণ নির্ণয় ও চিকিৎসা এখন সহজ। হেলিকোব্যাক্টার সংক্রমণ আছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রক্ত পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, ইউরিয়া ব্রেথ টেস্ট এবং এন্ডোস্কপি। ডাক্তার রোগীর উপসর্গ শুনে কোন পরীক্ষা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে থাকেন।

এই সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত অ্যান্টিবায়োটিক এবং এসিড কমানোর ওষুধ দিয়ে করা হয়। একসঙ্গে দুই থেকে তিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) ওষুধ দেওয়া হয়। সাধারণত ১০ থেকে ১৪ দিন এই ওষুধ চালাতে হয়। অনেক সময় ওষুধ শেষ হওয়ার পর আবার পরীক্ষা করে দেখা হয় সংক্রমণ পুরোপুরি সেরে গেছে কি না।

চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু জীবনযাপনের পরিবর্তন আনাও জরুরি। যেমন, খুব ঝাল, ভাজাপোড়া এবং মসলাযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া অভ্যাস করতে হবে এবং খালি পেটে দীর্ঘ সময় থাকা যাবে না। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা কফি পান এবং অ্যালকোহল থেকেও দূরে থাকা উচিত। অনেকেই খালি পেটে ব্যথা অনুভব করেন, এটি এই ব্যাকটেরিয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এমন হলে খালি পেটে থাকা এড়াতে হবে।

এ ছাড়া পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে এবং বাইরে খাওয়ার সময় খাবার কতটা পরিষ্কার তা খেয়াল রাখতে হবে। অন্যের ব্যবহৃত চামচ, গ্লাস বা বোতল ব্যবহার না করাই ভালো। পরিবারের কারো এই সংক্রমণ থাকলে, অন্য সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে। একই পরিবারে একজনের থাকলে অন্যদের মধ্যেও এই ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।

অনেক সময় পেটের সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বা দুশ্চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু এইচ. পাইলোরি একটি নিরাময়যোগ্য সংক্রমণ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই পেটে গ্যাস, ফাঁপা বা অস্বস্তিকে হালকাভাবে না নিয়ে প্রয়োজনে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সার্বিকভাবে বলা যায়, এইচ. পাইলোরি সংক্রমণ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সচেতনতা, সঠিক পরীক্ষা ও নিয়মমাফিক ওষুধ খেলে এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভ্যাস গড়ে তুললে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করাও সম্ভব।

এম.কে.

×