
ছবি: প্রতীকী
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো হার্ট বা হৃদযন্ত্র। এটি প্রতিনিয়ত রক্ত পাম্প করে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। হার্ট যদি ভালো থাকে, তাহলে শরীরের সবকিছুই ভালোভাবে কাজ করে। কিন্তু আজকাল নানা কারণে অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাদ্যাভ্যাস এই রোগের একটি বড় কারণ। তাই হার্ট ভালো রাখতে হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না, সেটা জানা খুবই জরুরি।
প্রথমেই বলা যায়, হার্ট ভালো রাখতে হলে প্রচুর শাকসবজি খাওয়া দরকার। শাকসবজিতে আছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বিশেষ করে পালং শাক, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লাল শাক, করলা, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি খুব উপকারী। সবজিগুলোতে ক্যালোরি কম থাকে, কিন্তু পুষ্টিগুণ বেশি। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়।
ফলমূলও হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। আপেল, কলা, আঙ্গুর, কমলা, পেয়ারা, বেরি জাতীয় ফল (যেমন: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি) নিয়মিত খাওয়া উচিত। ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে রক্ষা করে এবং রক্তনালীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তবে খুব বেশি মিষ্টি ফল একসাথে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মাছের মধ্যে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ম্যাকেরেল ইত্যাদি খাওয়া হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। এসব মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। যাদের এসব মাছ খাওয়ার সুযোগ কম, তারা দেশি মাছ যেমন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ইত্যাদিও খেতে পারেন।
মুঠো মুঠো বাদাম যেমন কাঠবাদাম, আখরোট, কাজু বাদাম ইত্যাদি হার্টের জন্য উপকারী, তবে এগুলো পরিমিত খেতে হবে। এগুলোতে ভালো চর্বি (হেলদি ফ্যাট) থাকে যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে উপকার পাওয়া যাবে।
এছাড়া খাবারের মধ্যে নিয়মিত লেবু, রসুন, আদা এবং মসুর ডাল রাখা উচিত। রসুনে এমন কিছু উপাদান থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। আদা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং প্রদাহ কমায়। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি হার্টকে সুস্থ রাখে। মসুর ডালসহ অন্যান্য ডাল ও লেগুম জাতীয় খাবার হার্টের জন্য ভালো প্রোটিন সরবরাহ করে, যা চর্বিযুক্ত মাংসের চেয়ে অনেক নিরাপদ।
যেসব খাবার বাদ দিতে হবে, তার মধ্যে প্রথমেই বলা যায় অতিরিক্ত লবণ ও চিনি। বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। চিনি বেশি খাওয়াও হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কেক, মিষ্টি, চকোলেট, সফট ড্রিংকস এসব যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, চিপস, ফাস্টফুড, ফ্রাইড ফুড, মাখন, গরুর বা খাসির চর্বিযুক্ত মাংস এগুলো খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা হার্ট ব্লক বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। এসব খাবার যত কম খাবেন, হার্ট তত ভালো থাকবে।
রেড মিট বা লাল মাংস, বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। এসব মাংসে চর্বি বেশি থাকে যা হার্টের জন্য ভালো নয়। এর পরিবর্তে মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), মাছ বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাওয়া ভালো।
সিগারেট ও অ্যালকোহল হার্টের সবচেয়ে বড় শত্রু। ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে এবং হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দেয়। অ্যালকোহলও উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাঁরা হার্ট ভালো রাখতে চান, তাঁদের এসব নেশা একেবারে ত্যাগ করতে হবে।
অতিরিক্ত তেল বা চর্বি দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। রান্নায় সরিষার তেল, অলিভ অয়েল বা সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা ভালো, তবে অল্প পরিমাণে। যাঁরা প্রতিদিন বাইরে হোটেলের বা ফাস্টফুড খাচ্ছেন, তাঁদের হার্টের ঝুঁকি বেশি। তাই বাসার হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবারই সবচেয়ে ভালো।
শুধু খাওয়ার অভ্যাস নয়, সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনধারাও হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন, শরীর ও হৃদয় দুই-ই ভালো থাকবে।
হার্ট ভালো রাখতে হলে বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, ডাল ও বাদাম খেতে হবে। আর কমাতে হবে চর্বিযুক্ত খাবার, লবণ, চিনি, ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। সচেতন খাবার নির্বাচনই হতে পারে একটি সুস্থ হৃদয়ের মূল চাবিকাঠি।
এম.কে.