ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্বকের এই সাধারণ লক্ষণগুলোই হতে পারে হৃদরোগের ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৩ জুলাই ২০২৫

ত্বকের এই সাধারণ লক্ষণগুলোই হতে পারে হৃদরোগের ইঙ্গিত

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের ত্বক প্রায়শই হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে দেয়। হার্ভার্ডের চিকিৎসকেরা এমনই কিছু ত্বকের লক্ষণের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, যা হৃদরোগের আগাম সংকেত হতে পারে। এতে রয়েছে ফোলা পা, ত্বকের রঙের পরিবর্তন, অস্বাভাবিক উত্থান ইত্যাদি। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি (AAD) এর গবেষণাও এই সংযোগকে সমর্থন করে। যদিও এসব লক্ষণ পাওয়া মানেই হৃদরোগ নিশ্চিত নয়, তবু দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, সময়মতো শনাক্ত করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

হার্ভার্ডের সংযুক্ত হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘হৃদয়কে আগে চিনতে চাইলে ত্বককে দেখুন।’ কারণ, হৃদরোগের লক্ষণ অনেক সময় বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের আগে বছর খানেক বা মাস খানেক আগেই ত্বকে প্রকাশ পেতে পারে। এই লক্ষণগুলো থেকে বোঝা যায় হৃদযন্ত্রের ভিতরে নানা ধরনের চাপ ও সমস্যা চলছে।

কেন ত্বকই হৃদরোগের কথা জানায়?

ত্বকের প্রতিটি মিলিমিটারে রক্তনালী রয়েছে। রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত না হলে, চাপ বেড়ে গেলে বা রক্তের কোলেস্টেরল জমে গেলে তা ত্বকের ওপর প্রকাশ পায়। পায়ের গোড়ালিতে ফোলা দেখা দিতে পারে, অক্সিজেন কমে ত্বক নীলচে হতে পারে, অথবা চোখের পাতার নিচে মোটা ফ্যাটি গঠন দেখা যেতে পারে। অনেক সময় রোগী শারীরিক সমস্যা বুঝতেই পারেন না, কিন্তু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত পরীক্ষায় এই সংকেতগুলো দেখতে পেয়ে হৃদরোগ সন্দেহ করতে পারেন।

হৃদরোগের ১২টি ত্বকের সংকেত যা উপেক্ষা করা যাবে না

  • পা ও গোড়ালির দীর্ঘস্থায়ী ফোলা: অতিরিক্ত তরল জমা হওয়ার কারণ হৃদপাম্প ঠিকমতো কাজ করছে না বোঝায়।
  • নীল বা বেগুনি ছোপ যা গোলাপি হয় না: সায়ানোসিস, রক্তে অক্সিজেন কম থাকার চিহ্ন।
  • হাত-পায়ের নীল বেগুনি জালাকার রূপ: লিভেদো রেটিকুলারিস, ছোট রক্তনালীগুলোতে কোলেস্টেরল জমার সংকেত।
  • চোখ বা জয়েন্টে হলুদ-কমলা মোমের মতো গঠন: জ্যান্থেলাসমা, উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ।
  • হঠাৎ করে মোমের মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি: এরুপটিভ জ্যান্থোমা, খুব বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড বা নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
  • নখ বাঁকানো ও আঙ্গুল ফুলে যাওয়া: ক্লাবিং, দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ বা ফুসফুসের সমস্যায় দেখা যায়।
  • নখের নিচে লাল বা বেগুনি সরু রেখা: স্প্লিন্টার হিমোরেজ, হৃদযন্ত্রের সংক্রমণ এন্ডোকার্ডাইটিসের চিহ্ন।
  • মসৃণ, মোমের মতো গাঁট বা লাম্প: সিস্টেমিক অ্যামিলয়েডোসিসের কারণে, যা হৃদপেশি কঠোর করে তোলে।
  • আঙুলে ব্যথাযুক্ত গাঁট: ওসলার নোড, সংক্রমণজনিত এন্ডোকার্ডাইটিসের ক্লাসিক লক্ষণ।
  • হাতের তালু বা পায়ের তলার ব্যথাহীন লালচে বাদামী দাগ: জেনওয়ে লেজন, একই হৃদযন্ত্রের সংক্রমণের আরেকটি সংকেত।
  • শিশুর শরীরে পেছনের দিক দিয়ে ফ্ল্যাট, আঙুলের মতো রিং-আকৃতির দাগ ও জ্বর: এরিথেমা মার্জিনাটাম, রিউম্যাটিক জ্বরের সতর্ক সংকেত।
  • শিশুর ঠোঁট ফাটল ও রক্তপাত ও শরীরের ফুসকুড়ি: কাভাসাকি ডিজিজের লক্ষণ, যা করোনারি আর্টারিতে প্রদাহ ঘটায়।

লক্ষণ দেখা দিলে করণীয়

প্রথমেই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক সময় ফোলা, লিভেদো প্যাটার্ন বা স্প্লিন্টার রেখা নতুন ওষুধ, সামান্য আঘাত বা ঠান্ডা লাগার মতো অন্যান্য কারণে হতে পারে। তবু হৃদরোগের ঝুঁকি থাকায় দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শে রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও সংক্রমণ যাচাইয়ের পরীক্ষা, ইকোকার্ডিওগ্রাম বা রক্তনালীর ইমেজিং করানো হতে পারে। এছাড়া ত্বকের পরিবর্তনের ছবি তুলে রাখুন, যা চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×