
ছবি: সংগৃহীত
চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সামরিক ড্রোন হয়ে উঠেছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী হাতিয়ার। রাশিয়া তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে একদিকে যেমন নিজস্ব উৎপাদনে জোর দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি ইরান থেকেও ড্রোন সংগ্রহ করছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনকে ড্রোন সরবরাহ করছে পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্রগুলো, এবং এই ড্রোনগুলোই রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইউক্রেন। কখনও কখনও এই ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরেও হামলা চালানো হচ্ছে।
যুদ্ধের এ পর্যায়ে ড্রোনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা উপলব্ধি করছে মস্কো। সে কারণে সম্প্রতি রাশিয়া ড্রোন উৎপাদনে ব্যাপক জোর দিয়েছে। এমনকি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাতে চাইছে, যেখানে তারা ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রতিরাতে ২০০০টি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
এই তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষণে।
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে রাশিয়ার শাহেদ ড্রোন তৈরির কারখানাগুলোর আয়তন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যদিও ইউক্রেন এই কারখানাগুলোতে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষতির তথ্য মেলেনি।
রাশিয়ার ক্রমাগত ড্রোন হামলা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের মতো ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির তুলনায় ইরানি শাহেদ ড্রোনের কম খরচ ইউক্রেনের জন্য এক কঠিন সমীকরণ সৃষ্টি করছে।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও কমনস্টাফ বিভাগের কমান্ডার মেজর জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান ফ্রয়েডিং বলেন,
“রাশিয়া তাদের শাহেদ ড্রোন উৎপাদনের ক্ষমতা আরও বাড়াতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য, যেকোনো মুহূর্তে একযোগে ২০০০ ড্রোন মোতায়ন করা।”
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (ISW) এর একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে রাশিয়া শাহেদ ড্রোনের ব্যবহার প্রতি মাসে ৩১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যেই রাশিয়া প্রতিরাতে ২০০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
তবে একই বিশ্লেষণে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাশিয়া সম্ভবত এত বিশাল সংখ্যক ড্রোন দিয়ে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যেতে পারবে না।
উল্লেখ্য, শাহেদ সিরিজের ড্রোনগুলো মূলত ইরানি প্রযুক্তি, তবে ২০২৩ সালের শুরু থেকে রাশিয়া নিজস্ব সংস্করণে শাহেদ ধরনের ড্রোন তৈরি করছে।
পশ্চিমা সরকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো চীন থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS) জানায়, ২০২৩ সাল থেকে রাশিয়ার শাহেদ উৎপাদন সুবিধার আয়তন দ্বিগুণ হয়েছে।
ইউক্রেন রাশিয়ার ইলাবুগা শহরের ড্রোন কারখানায় হামলার চেষ্টা করলেও সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ মেলেনি।
এছাড়া ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, রাশিয়া ইজেবস শহরেও ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া যদি সত্যিই আসন্ন নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিরাতে ২০০০ ড্রোন হামলার সক্ষমতা অর্জন করে, তবে সেটি হবে ইউক্রেনের জন্য এক বিরাট কৌশলগত বিপর্যয়।
শেখ ফরিদ