ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্রিটিশ বহরে নতুন যুদ্ধবিমান, পুতিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৩ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ বহরে নতুন যুদ্ধবিমান, পুতিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে তৈরি হতে যাওয়া ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘দ্য টেম্পেস্ট’ হতে যাচ্ছে বিশ্ব সামরিক ইতিহাসের অন্যতম আধুনিক ও দূরপাল্লার যুদ্ধযান। সাধারণ যুদ্ধবিমানের তুলনায় যার পাল্লা, পেলোড ক্যাপাসিটি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অনেক বেশি। আকারেও এটি হার মানাবে এফ-৩৫ বা ইউরোফাইটার টাইফুনের মতো বাজারের সেরা যুদ্ধবিমানগুলোকে।

নামের শুরুতেই থাকা ‘টেম্পেস্ট’ তকমাই এর বিস্ফোরক আগমনী বার্তা। যুক্তরাজ্য বলছে, এটি তাদের ভবিষ্যৎ ফ্ল্যাগশিপ ফাইটার জেট, যা ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের (RAF) গেমচেঞ্জার হয়ে উঠবে। এই প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের সাথে মিত্র হিসেবে রয়েছে ইতালি ও জাপান। বাস্তবায়নের পর ‘দ্য টেম্পেস্ট’ শুধু ব্রিটিশ বহরেই নয়, বরং মিত্রবাহিনীগুলোর যুদ্ধাস্ত্রেও যুক্ত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ফাইটার জেটটি মূলত রাশিয়াকে লক্ষ্য করেই তৈরি। যুক্তরাজ্যের যেকোনো ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে এটি রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে পুনরায় দেশে অবতরণ করতে পারবে, তাও কোনো মিড-এয়ার রিফুয়েলিং ছাড়াই। লন্ডনের দাবি অনুযায়ী, এটি রাডার ফাঁকি দিতে পারবে সহজেই, কারণ প্রায় সকল অস্ত্র ব্যবস্থা বিমানটির অভ্যন্তরে থাকবে।

বিশাল আকার, বিশাল ক্ষমতা
‘দ্য টেম্পেস্ট’-এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ মিটার, যা ইউরোফাইটার টাইফুন বা মার্কিন এফ-৩৫ এর তুলনায় অনেক বড়। বড় সাইজ মানেই বড় ফুয়েল ট্যাংক, ফলে এটি একটানা অনেক দূর যেতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই জেট মিড আটলান্টিক অঞ্চল পেরিয়ে দেড় হাজার মাইলের বেশি দূরত্বে ছুটতে পারবে— যা হবে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

বিস্ফোরক বহনের ক্ষেত্রেও টেম্পেস্ট দ্বিগুণ সক্ষমতা দেখাবে এফ-৩৫ এর তুলনায়। আনুমানিক ধারণা অনুযায়ী, এর ‘পেলোড ক্যাপাসিটি’ হবে রিসটনের কাছাকাছি। এটি হবে ইন্টেলিজেন্ট, কানেকটেড ও ফিউশন-ভিত্তিক একটি জেট, যার মাধ্যমে মাটিতে থাকা সেনা কিংবা আকাশে থাকা ড্রোনের সাথেও সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।

রাডার ফাঁকি, রোলস-রয়েস ইঞ্জিন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানটি নির্মাণে রয়েছে বিশ্বখ্যাত মোটর নির্মাতা রোলস-রয়েস, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানি বিএই সিস্টেমস, ইতালির লিওনাদো এসপিএ এবং মিসাইল প্রস্তুতকারক এমবিডি-র সমন্বিত প্রচেষ্টা। বিমানটির প্রাথমিক ফ্লাইট টেস্ট ২০২৭ সালে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের বহরে যুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।

ইউরোফাইটার টাইফুন ছিল এতদিন পর্যন্ত ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর মূল ভরসা। তবে ‘দ্য টেম্পেস্ট’ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে টাইফুনকে সরিয়ে নতুন ফ্ল্যাগশিপ হিসেবে জায়গা করে নেবে এই যুদ্ধবিমানটি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধবিমান শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বরং ইউরোপ ও NATO মিত্রদের প্রতিরক্ষা কৌশলেই আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। টেম্পেস্টের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধক্ষেত্রে আধিপত্যের লড়াইয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।

শেখ ফরিদ 

×