
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে পুরুষদের মধ্যে একটি ভয়াবহ ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠছে প্রোস্টেট ক্যানসার। অনেকটাই নীরবে শরীরে বিস্তার ঘটে এই ক্যানসারের, যা সময়মতো ধরা না পড়লে হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক প্রাণঘাতী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের, বিশেষত যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য প্রোস্টেট ক্যানসার একটি বড় ঝুঁকি। তবে আশার কথা হলো—বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন রয়েছে উন্নত স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা পদ্ধতি, যা জীবন বাঁচাতে পারে।
নীরবে ঘটে যাওয়া বিপদ
প্রোস্টেট ক্যানসার শুরু হয় মূত্রথলির নিচে ও মলদ্বারের সামনে অবস্থিত পুরুষদের একটি গ্রন্থিতে—প্রোস্টেট গ্রন্থি। প্রজনন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই গ্রন্থির ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়েই ঘটনাচক্রে এটি শনাক্ত করেন।
কোন উপসর্গগুলো উপেক্ষা করা যাবে না?
যদিও শুরুর দিকে এর বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তবু নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে সাবধান হওয়া জরুরি:
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, বিশেষত রাতে
- মূত্র ত্যাগে কষ্ট বা দেরি হওয়া
- মূত্রের গতিতে দুর্বলতা বা বাধা
- মূত্র বা বীর্যে রক্ত
- তলপেট, পিঠ বা কোমরে ব্যথা
অন্যান্য কারণে (যেমন ইউরিনারি ইনফেকশন বা বিফল প্রোস্টেট) এই উপসর্গ হতে পারে। তবু এগুলোকে ‘বয়সজনিত’ বলে এড়িয়ে যাওয়া বিপজ্জনক।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
- বয়স: ৫০ বছরের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের ২ জনের বেশি সদস্য আক্রান্ত হলে ঝুঁকি অনেক বেশি
- জেনেটিক কারণ: BRCA1, BRCA2, CHEK2, ATM ইত্যাদি জিন
- জীবনযাপন: অতিরিক্ত মদ্যপান, ভাজা খাবার, রেড মিট (লাল মাংস), স্থূলতা প্রভৃতি
স্ক্রিনিং ও নির্ণয়ের পদ্ধতি
বিশ্বজুড়ে PSA টেস্ট (Prostate-Specific Antigen) ও DRE (Digital Rectal Examination) এর মাধ্যমে প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। সন্দেহ হলে mpMRI এবং বায়োপসি করে নিশ্চিত হওয়া হয়। বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে এখনো জাতীয়ভাবে স্ক্রিনিং চালু না থাকলেও ৫০ বছরের পর থেকে নিয়মিত পরীক্ষা জীবন রক্ষা করতে পারে।
আধুনিক চিকিৎসা কী বলছে?
ক্যানসারের স্তর ও রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারিত হয়। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:
- অ্যাকটিভ সারভেইলেন্স: কম ঝুঁকির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের জন্য উপযুক্ত
- সার্জারি: প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ
- রেডিয়েশন থেরাপি
- হরমোন থেরাপি
- কেমোথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি: উন্নত বা প্রতিরোধী ক্যানসারের ক্ষেত্রে
- রোবটিক সার্জারি ও টার্গেটেড থেরাপি: আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক নির্ভুলতা ও দ্রুত সেরে ওঠা
প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়লে মানসিক চাপ বা হতাশা হতে পারে। তবে খুশির খবর হলো, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে বেঁচে থাকার হার ৯৮% এর বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পর মূত্রধারণে অসুবিধা বা যৌনক্ষমতায় প্রভাব পড়লেও চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব