তিন বছর পর স্বচ্ছ পানি ঘোলা হয়ে যায়

বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাহাড়ের চূড়ায় বগালেকের পানি প্রতি তিন বছর পরে একবার  ঘোলা হয়ে যায়। হঠাৎ করেই রহস্যময় এ লেকের পানি কিছুটা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। ঘোলা হয়ে গেলে এই পানি স্থানীয় বাসিন্দারা সাময়িকভাবে ব্যবহার করেন। স্বচ্ছ লেকের পানি হঠাৎ করেই ঘোলা হয়ে যাওয়ায় বগালেকের পাড়ে বসবাসকারী বম, মারমাসহ পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জন্য অনেকটা দুর্ভোগ নেমে এসেছে। 
সরেজমিনে জানা গেছে, বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং রেঞ্জে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় নয়নাভিরাম এই লেকটির অবস্থান। অনেকেই এটিকে ড্রাগন লেকও বলে থাকেন। উঁচু পাহাড়ের ওপর স্বচ্ছ পানির এই লেকটি পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য উৎকৃষ্ট স্থান। তবে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করে এই লেকের স্বচ্ছ পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। 
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন বছর পর লেকের পানি ঘোলা হয়। আর পানি ঘোলা হওয়ার আগে লেকের অনেক ছোট বড় মাছ মারা যায়। লেকের পাড়ের বম সম্প্রদায়ের বয়স্করা এখনো বিশ্বাস করেন লেকের পানির গভীরে থাকা ড্রাগনের   লেজ নাড়ানোর কারণে পানি ঘোলা হয়ে থাকে।

পাহাড়িরা যে বিশ্বাসই করুক না কেন, লেকের পানি ঘোলা হওয়াটাকে গবেষকরা অন্য দৃষ্টিতে দেখেন। গবেষকরা বলে থাকেন, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বগালেকের সৃষ্টি। আর এ কারণেই কয়েক বছর পর পর লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে ফসফরাস যুক্ত হয়। এ সময় লেকের পানি ব্যবহার করা যায় না। তবে সাপ্তাখাকের মধ্যেই ঘোলা পানি আবার স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। 
বম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, লেকের পানি যখন ঘোলা হয় তখন পাহাড়ে ফসলও ভালো হয়। তবে এটি তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 
স্থানীয় বাসিন্দা এলেক্স বম জানিয়েছেন, স্বচ্ছ লেকের পানি ঘোলা হয়ে গেলে পর্যটক এবং তাদের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আসে। পানি ঘোলা হওয়ার আগে  কিছু মাছ মারা যায়। তবে এটি তাদের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে রুমার বম সম্প্রদায়ের নেতা জুয়েল বম জানিয়েছেন, একটি ড্রাগন (সাপ) মেরে ফেলার পর এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে বলে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে সম্প্রদায়ের মধ্যে। এমন অনেক রূপকথাই প্রচলিত আছে বগালেক নিয়ে। কিন্তু প্রায় সময়ই লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। ছোটকাল থেকেই তিনি লেকের পানির এই অবস্থা দেখে আসছেন বলেও জানান। 
বম সম্প্রদায়ের আরেক নেতা ভানতি¬র বম জানায়, স্বচ্ছ পানি ঘোলা হয়ে যাওয়া পর্যটকদের কাছে বিস্ময়কর হলেও বম সম্প্রদায়ের কাছে এটি অনেক পুরানো ঘটনা। পানি ঘোলা হওয়া নিয়ে বম সম্প্রদায়ের বয়স্করা অনেক ধরনের কথাই বলে থাকেন। যখন বগালেকের পানি ঘোলা হয় তখন এই লেক থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের রাইংখ্যং লেকের পানিও ঘোলা হয়ে থাকে বলে এমন কথা এলাকায় প্রচলিত রয়েছে। 
বম সম্প্রদায়ের প্রবীণরা জানিয়েছেন, শত শত বছর আগে লেক এলাকায় একটি ড্রাগন বসবাস করত। এটিকে হত্যা করার পর এ বগালেকের জন্ম হয়। এমন মিথ বম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এখনো। এখনো ওই মৃত ড্রাগন লেকের নিচে লেজ নেড়ে পানি ঘোলা করে বলে বিশ্বাস রয়েছে অনেক বমদের মাঝে।
বাম সম্প্রদায়ের প্রবীণদের তথ্য মতে, বগালেকের গড় গভীরতা প্রায় ১৫১ ফুট। সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৫ মিটারের কাছাকাছি। বান্দরবানের রুমা উপজেলার থেকে চাঁদের গাড়িতে এই লেকে যাওয়া যায়। এই লেকের পরেই দেশের সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং ও তাজিংডং।