
ছবি: সংগৃহীত
প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুর্বেদের ওপর ভরসা করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছেন অনেকে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি আয়ুর্বেদও জানায়—পানীয়ের মাধ্যমেও রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য আনা সম্ভব। বিশেষ করে দারচিনি, মেথি, করলা, এলোভেরা, গ্রিন টি ও আপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি উপাদান দিয়ে তৈরি পানীয় নিয়মিত গ্রহণ করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে, হজমে সহায়তা করে, এমনকি চিনির প্রতি আকর্ষণও কমায়।
নিচে আয়ুর্বেদ অনুসারে ১০টি প্রাকৃতিক পানীয়ের তালিকা দেওয়া হলো, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যও উন্নত করে:
১. পানি
সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর পানীয়। পর্যাপ্ত পানি পান শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করে দেয় এবং বিপাকক্রিয়া সচল রাখে। চাইলে এতে লেবু বা শসা মিশিয়ে হালকা স্বাদ আনা যায়।
২. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যাটেকিন ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ গ্রিন টি, চিনিমুক্তভাবে পান করা উপকারী।
৩. দারচিনি চা
দারচিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে ও উপবাসকালীন রক্তে শর্করা হ্রাসে সহায়ক। এক টুকরো দারচিনি ১০ মিনিট ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে এক কাপ করে পান করতে পারেন।
৪. আপেল সিডার ভিনেগার পানি
এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে দিনে একবার, বিশেষ করে খাবারের আগে। এটি খালি ভিনেগার পান করা থেকে বিরত থাকুন—দাঁত ও পেটের ক্ষতি হতে পারে।
৫. করলার রস (করলা জুস)
করলায় ইনসুলিনের মতো কাজ করে এমন যৌগ রয়েছে। স্বাদ তীব্র হলেও ১/৪ বা ১/২ কাপ করে সপ্তাহে ২-৩ বার খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. এলোভেরা জুস
অমিষ্ট, খাদ্য-মানের এলোভেরা জুস নিয়মিত খেলে উপবাসকালীন গ্লুকোজ কমে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে। সপ্তাহে কয়েকবার ৫০–১০০ মিলিলিটার পান করা যেতে পারে।
৭. মেথি ভেজানো পানি
রাতে ১ চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করলে রক্তে শর্করার শোষণ ধীর হয় এবং হজমও ভালো হয়। এটি রোজকার অভ্যাস হিসেবে রাখা যেতে পারে।
৮. লো-গ্লাইসেমিক সবজির জুস
ঢেঁড়স, পালং, শসা, টমেটো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সবজির জুস কম চিনি ও বেশি আঁশযুক্ত, যা গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। গাজর বা বিট জাতীয় উচ্চ শর্করাযুক্ত সবজি নিয়মিত না রাখাই ভালো।
৯. হার্বাল টি (ক্যামোমাইল, হিবিসকাস)
চিনি ছাড়া ক্যাফেইনমুক্ত হার্বাল টি রক্তে শর্করা কমাতে এবং হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতায় সহায়তা করে। প্রতিদিন ১–২ কাপ রাতে পান করা যেতে পারে।
১০. চিনি ছাড়া উদ্ভিজ্জ দুধ
আলমন্ড, সয়া বা ওট মিল্কের আনসুইটেনড সংস্করণ সাধারণ গরুর দুধের চেয়ে কম কার্বসমৃদ্ধ এবং রক্তে চিনি বাড়ায় না। চা, কফি বা স্মুদি তৈরিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
নোট: এই আয়ুর্বেদিক পানীয়গুলো গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় ভারসাম্য আনাও জরুরি। কেউ ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাদের অবশ্যই এসব পানীয় গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব