
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা ভোগ করছেন। এই সব রোগ একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং একই উৎস থেকেই অনেকটা উদ্ভূত হয়। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, জীবনযাত্রায় কিছু সাধারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা বা অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রতিরোধও করা সম্ভব। যদিও ওষুধ সেবন চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, তবে নিচের এই ৬টি অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে আপনার শরীরকে দেবে বিশাল উপকার।
১. খাবারের মাঝে দীর্ঘ বিরতি (ফাস্টিং)
খাবারের মাঝে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীর একধরনের ‘রিসেট’ মোডে চলে যায়। এই সময়ে শরীরের শক্তির উৎস হিসেবে চর্বিকে ব্যবহার করা শুরু করে, যা রক্তে চিনি ও লিভারের চর্বির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এতে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
কীভাবে কাজ করে:
ফাস্টিং রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের চর্বি কমায় এবং হৃদ্স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
পদ্ধতি:
বিজ্ঞানসম্মত ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ (১৬/৮) পদ্ধতিতে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে বাকি ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাবার খাওয়া যায়। তবে এটি উপযোগী না হলে দিনে ৩ বেলার খাবার খেতে পারেন, তবে মাঝে নাস্তা একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।
সতর্কতা: ফাস্টিং শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. প্রতিটি খাবারের পর হালকা হাঁটা
খাওয়ার পর মাত্র ২-১০ মিনিট হেঁটে নিলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। হাঁটার ফলে পেশির কোষগুলি অতিরিক্ত রক্তচিনি শোষণ করে, ফলে সুগার লেভেল থাকে স্থিতিশীল।
বৈজ্ঞানিক মত:
খাবারের পর হেঁটে নিলে ইনসুলিন ও ব্লাড সুগার কমে। এর ফলে হজম ভালো হয়, মেজাজ ভালো থাকে এবং হৃদ্স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
পরামর্শ:
প্রতিটি খাবারের পর বাসা বা অফিস চত্বরেই হালকা হাঁটুন। এতে ওজন কমবে ও শরীর থাকবে চনমনে।
৩. প্রতি ঘণ্টায় শরীর চালনা করুন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া এবং লিভারের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই প্রতি ঘণ্টায় কয়েক মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
প্রতিঘণ্টায় শরীর চালালে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, হৃদ্স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হাড় মজবুত হয়।
পরামর্শ:
জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটা, স্ট্রেচিং বা হলওয়ে হাঁটার মাধ্যমে সহজেই এই অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।
৪. দিন শুরু করুন গরম পানি, বাদাম ও কুমড়ার বিচি দিয়ে
ঘুম থেকে উঠে গরম পানি পান করলে হজমক্রিয়া সক্রিয় হয়। সঙ্গে যদি থাকে রাতভর ভিজিয়ে রাখা বাদাম ও কিছু কুমড়ার বিচি, তবে দিনটা শুরু হবে স্বাস্থ্যকরভাবে।
কেন বাদাম ও কুমড়ার বিচি:
বাদামে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন ও ভালো চর্বি, যা রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কুমড়ার বিচিতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ইনসুলিন কার্যকারিতা ও লিভারের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।
পদ্ধতি:
রাতে ভিজিয়ে রাখা বাদাম সকালে গরম পানির সঙ্গে খান। কুমড়ার বিচি সকালে ব্রেকফাস্টে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৫. প্রতিটি খাবারে রাখুন সবজি
সবজি হলো সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে রাখার। পালং শাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, গাজর, মিষ্টিকুমড়ো, বিট, শিম, ধনেপাতা ইত্যাদি ফাইবার ও পুষ্টিতে ভরপুর।
উপকারিতা:
ফাইবার রক্তে চিনির প্রবেশ ধীর করে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায় ও লিভার ভালো রাখে।
পরামর্শ:
প্লেটের অর্ধেক অংশে রাখুন রঙিন সবজি, সঙ্গে সামান্য কার্ব ও পরিমাণমতো প্রোটিন।
৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল ছাড়ুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল আপনার লিভার, হৃদয় ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় শত্রু।
উপকারিতা:
ধূমপান টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও মদ্যপান ছাড়লে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
সতর্কবার্তা: এই প্রতিবেদনটি শুধু সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে রচিত। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়। যেকোনো অভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব