
ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ওই স্কুলের শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (৩৭)। মঙ্গলবার (২২জুলাই) সন্ধ্যায় জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে তার জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মাসুকা বেগম জেলা সদরের চিলোকুট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। মাসুকা বেগমের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাসুকা ছিলেন সবার ছোট। মা মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। শিক্ষা জীবন শেষ করে প্রায় ৮ বছর আগে মাসুকা রাজধানীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। গত ৩ বছর আগে সেখান থেকে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন। সেখানে তার দায়িত্ব ছিল প্রাইমারি শাখার বাংলা ভার্সনে প্রাইমারি শাখার ইরেজি শিক্ষক হিসেবে। মাইলস্টোন প্রাইমারি বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি শুধু শিক্ষকই নন, ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক, অনুপ্রেরণার উৎস। সততা, বিনয় আর দায়িত্ববোধে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী একজন মানুষ। সোমবার সকালে তিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন। এসমন সময় বিকট শব্দে একটি প্রশিক্ষণের যুদ্ধ বিমান আঁচড়ে পড়ে। এতে তিনি সহ তার ক্লাস রুমের অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। তখন আহত তিনি জীবনবাজি রেখে ক্লাসে থাকা অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি মাসুকার। সোমবার গভীর রাতে ঢাকা বার্ন ইউনিটে ইন্তেকাল করেন। মারা যাওয়ার ঠিক আগে পাশের বেডে থাকা আরেক সহকর্মীকে বলে যান, তার মরদেহ যেন সোহাগপুর বোনের বাড়িতে দাফন করা হয়। মৃত্যুর আগে মাসুকার বলে যাওয়া ওসিয়ত অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামে তার বোনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় মরদেহ। এসময় এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির অবতারণা হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়।
এমন আবেগঘন মাসুকার ভাগ্নি নিধি জানান, দুর্ঘটনার পর খালার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে জানা যায় তিনি বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি, শরীরের প্রায় ৮৫% পুড়ে গেছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি, খালা আর বেঁচে নেই। পরে আমরা ভোরে সেখানে যাই। তিনি জানান, মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার সময় পাশের বেডে খালার এক সহকর্মী জানান, শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করার সময়ও বোনেত পরিবারের কথা তিনি বলছিলেন। মারা যাওয়ার পর যেন মরদেহ দাফন করা হয় যেন বোনের বাড়িতে।
মাসুকা বেগমের এক মাত্র ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান জানান-আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাসুকার বয়স ছিল মাত্র ৫-৬ বছর। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতাম। কখনো কল্পনাও করিনি, এমনভাবে তাকে চিরবিদায় জানাতে হবে। তিনি আরও বলেন, মাসুকাকে বিয়ে দিতে পারিনি। একমাত্র ভগ্নিপতি হিসেবে তা আমার ব্যর্থতা। চেষ্টা করেছি কয়েকবার। বয়স ৩০ অতিবাহিত হওয়ার পর বিয়ের প্রতি তার আর আগ্রহ ছিল না। সে তার শিক্ষার্থীদেরকে নিজের সন্তানের মতো ভালবাসতেন।
মাসুকার বাবা সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী জানান, মাসুকার সাথে মাঝে তার মুঠোফোনে কথা হতো। তার খোঁজ খবর নিতেন। প্রতিমাসে হাত খরচ পাঠাতেন।
আঁখি