
ছবি: প্রতীকী
ক্যানসার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান KAIST-এর বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতির খোঁজ পেয়েছেন, যা ক্যানসার কোষকে মেরে না ফেলেই সেগুলোকেই ‘সাধারণ ও সুস্থ কোষে’ রূপান্তর করতে সক্ষম। বলা হচ্ছে এতে কেমোথেরাপি কিংবা রেডিয়েশনের মতো কঠিন চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।
কীভাবে কাজ করে এই নতুন পদ্ধতি?
এই প্রযুক্তির মূল ভিত্তি হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর কম্পিউটার সিস্টেম, যার নাম BENEIN (Boolean Network Inference)। এটি ক্যানসার কোষের জিনগত নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করে কোন কোন জিন ক্যানসার কোষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করছে। এরপর সেসব ‘মূল নিয়ন্ত্রক’ জিনকে নিস্ক্রিয় করে ক্যানসার কোষকে সুস্থ কোষে রূপান্তর করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, MYB, HDAC2 ও FOXA2 নামের মাত্র তিনটি জিন বন্ধ করলেই কোলন ক্যানসারের কোষগুলো স্বাভাবিক কোষে পরিণত হতে শুরু করে।
ল্যাবরেটরি ও পশুদের ওপর সফল পরীক্ষা
এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Advanced Science-এ। এতে দেখা গেছে, কোলন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কোষের গঠন ও আচরণ বদলে গেছে। শুধু তাই নয়, ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে টিউমারের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে গেছে।
পুনঃনির্মিত কোষগুলোতে KRT20 ও VDR নামের প্রোটিন মার্কার প্রকাশ পেয়েছে, যা সাধারণ সুস্থ অন্ত্রের কোষে দেখা যায়। পাশাপাশি ক্যানসার বৃদ্ধির জন্য দায়ী MYC ও WNT পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু কোলন নয়, ভবিষ্যতে সব ধরনের ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহারের সম্ভাবনা
যদিও গবেষণাটি কেবল কোলন ক্যানসারের উপর কেন্দ্রীভূত, তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে এই প্রযুক্তি অন্যান্য ক্যানসারের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। যেহেতু এটি এআই ও জিন নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণভিত্তিক, তাই প্রতিটি ধরনের ক্যানসারের জন্য আলাদাভাবে ব্যবহারযোগ্য করার সুযোগ রয়েছে।
এখনই মানবদেহে নয়
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদ্ধতির ওপর এখনো অনেক পরীক্ষা-বিশ্লেষণ বাকি রয়েছে। তাই মানুষের দেহে এর প্রয়োগের আগে আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও নিরাপত্তা যাচাই প্রয়োজন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি সফলভাবে কার্যকর হলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হতে যাচ্ছে। এতে রোগীদের কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের কষ্টকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে এবং চিকিৎসা হবে আরও নিরাপদ, নিখুঁত ও ব্যাক্তিগতকরণযোগ্য (personalised)।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে তৈরি। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। যেকোনো শারীরিক অসুস্থতা কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব