
ছবিঃ সংগৃহীত
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুজ-অধ্যুষিত সুয়েইদা প্রদেশে হঠাৎ করে শুরু হওয়া সহিংসতা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সুয়েইদা শহরের জাতীয় হাসপাতালে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
বিবিসি প্রতিনিধিদল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে জানতে পেরেছে, সেখানে ওয়ার্ডের মধ্যেই রোগীদের হত্যা করা হয়েছে।
হাসপাতালের চিত্র ও ভয়াবহতা
সুয়েইদার প্রধান হাসপাতালের পার্কিং লটে সারি সারি সাদা প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো মৃতদেহ পড়ে আছে। কিছু ব্যাগ খোলা, ভিতরে বিকৃত, ফুলে ওঠা মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। গরমে মৃতদেহ থেকে ভয়ংকর গন্ধ ছড়াচ্ছে, রক্তে মাখা পিচ ঢালা মাটিতে পা রাখা যাচ্ছে না।
চিকিৎসকদের সাক্ষ্য
নিউরোসার্জন ডা. উইসাম মাসউদ বলেন, “এটা একটা গণহত্যা ছিল। সৈন্যরা বলেছিল শান্তি আনবে, কিন্তু তারা রোগী থেকে শুরু করে শিশু-প্রবীণ সবাইকে হত্যা করেছে।”
ডা. মাসউদ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যায়—রক্তাক্ত চাদরে মোড়ানো অবস্থায় ওয়ার্ডে রোগীদের মৃতদেহ পড়ে আছে।
সাক্ষ্য দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ নাগরিকরা
হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক কাইনেস আবু মোটাব বলেন, “তাদের অপরাধ কী ছিল? কেবলমাত্র তারা সংখ্যালঘু বলেই কি?”
একজন শিক্ষক ওসামা মালেক বলেন, “তারা আট বছরের প্রতিবন্ধী এক শিশুকে মাথায় গুলি করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতাল রক্ষা করার কথা। অথচ তারা হাসপাতালে ঢুকে ঘুমন্ত রোগীদের গুলি করেছে।”
সংশয় ও তদন্ত দাবি
সব পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগ এনেছে। জাতিগত সংঘর্ষে বেদুইন, দ্রুজ এবং সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, কেবল গত বুধবারেই ৩০০ জন নিহত হয়েছে, যদিও এই সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "সামরিক পোশাক পরা কিছু ব্যক্তি" দ্বারা সুয়েইদায় “ভয়ানক লঙ্ঘন” হয়েছে বলে তারা অবগত।
দ্রুজদের অবস্থা ও মানবিক বিপর্যয়
সুয়েইদা শহরে প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, শহর কার্যত অবরুদ্ধ। বিবিসির দল প্রবেশের আগে একাধিক চেকপয়েন্ট পার হতে হয়েছে।
শহরের ভিতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত দোকান, পুড়ে যাওয়া গাড়ি, ট্যাংকে চূর্ণবিচূর্ণ ভবন দেখা গেছে—প্রমাণ করে শহরটি বড় ধরনের সংঘর্ষ দেখেছে।
আট বছরের হালার গল্প
বিবিসি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল ত্যাগের আগে দেখতে পায় ছোট্ট হালা আল খাতিবকে। তার মুখে রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ, একটি চোখ হারিয়ে ফেলেছে সে।
সে জানায়, বন্দুকধারীরা তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সে একটি আলমারির ভিতরে লুকিয়ে ছিল, তখনও তাকে মাথায় গুলি করা হয়। সে জানে না—তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন।
নোভা