ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

দুই দিনে এয়ার ইন্ডিয়ার ৩ দুর্ঘটনা: হংকং-দিল্লি ফ্লাইটে অবতরণের পর আগুন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৩:৪০, ২৩ জুলাই ২০২৫

দুই দিনে এয়ার ইন্ডিয়ার ৩ দুর্ঘটনা: হংকং-দিল্লি ফ্লাইটে অবতরণের পর আগুন

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে সংস্থাটির বিভিন্ন রুটের বিমানে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) হংকং থেকে দিল্লিগামী একটি ফ্লাইট অবতরণের পর আগুন ধরে যায় বিমানের সহায়ক বিদ্যুৎ ইউনিটে (APU)। যদিও যাত্রীরা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন।

বিমানসংস্থা জানায়, AI-315 ফ্লাইটটি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই APU-তে আগুন ধরে যায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা নিরাপদে বিমানের বাইরে বেরিয়ে আসেন।

বিমানে ক্ষতি, তদন্তে ডিজিসিএ

দুটি ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারবাস A321 মডেলের ওই বিমানটিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিমানটি গ্রাউন্ড করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA)-কে জানানো হয়েছে।

এই দুর্ঘটনা এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য আরও এক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, গত ছয় মাসে সংস্থাটিকে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য নয়বার নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ—এ তথ্য সোমবার সংসদে জানান ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহল।

দুই দিনে আরও দুটি বিপত্তি

হংকং-দিল্লি ফ্লাইটের আগুনের ঘটনার আগের দিন আরও দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।

১. কোচি-মুম্বাই ফ্লাইট: অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এতে বিমানের অংশবিশেষ এবং রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বিমানের ইঞ্জিন কভারে ভাঁজ পড়ে গেছে।

২. দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইট: শেষ মুহূর্তে—১৫৫ কিমি/ঘণ্টা গতিতে চলার সময়—ফ্লাইটটি টেকঅফ বাতিল করে। বিমান সংস্থা জানিয়েছে, ‘টেকঅফের সময় একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি শনাক্ত করা হয়।’

এমনকি গত মাসেও একই রুটে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারকে হংকং বিমানবন্দরে ফিরে যেতে হয়েছিল।

২৭৪ জন নিহত, ‘AI-171’ ট্র্যাজেডি

সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে জুন ১২ তারিখে। এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ফ্লাইট, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের পথে উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ড পর ভেঙে পড়ে। এতে ২৭৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন মাটিতে থাকা সাধারণ মানুষ। একমাত্র একজন যাত্রী বেঁচে যান।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, মাঝআকাশে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিমানটি একটি কলেজ হোস্টেলে আছড়ে পড়ে।

ইচ্ছাকৃত জ্বালানি বন্ধ? বিতর্কিত দাবি

দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) জানায়, রানওয়ে ছাড়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের জ্বালানি সরবরাহের দুইটি সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’-এ চলে যায়।

আমেরিকান পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল দাবি করেছে, ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল নিজেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করেন। তবে এ দাবির কোনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

AAIB ও ইউএসের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে। তারা বলছে, বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের বিমানের জ্বালানি সুইচগুলো স্প্রিং-লোডেড এবং পাইলট ইচ্ছাকৃত না হলে নড়ে না। এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে দুর্ঘটনাজনিত সুইচ চালু/বন্ধ প্রতিরোধের জন্য।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×