
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার বার্মিংহামে এক ৪ বছরের লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর পিতা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ সেখানে বসবাস করছিলেন, তাকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর কর্মকর্তারা আটক করেছে। তার আইনজীবী ও পরিবারের আশঙ্কা, হয়তো তিনি আর কখনোই তার মেয়েকে দেখতে পারবেন না।
পরিবারের আইনজীবী কিম্বারলি ফাসকিং বলেন, “ওদের শেষ বিদায় দেখা খুবই কষ্টকর ছিল—হয়তো এটাই ছিল তাদের জীবনের শেষ দেখা।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশুটির মা-বাবা ছয় বছর আগে গুয়াতেমালা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তবে শিশুটি যুক্তরাষ্ট্রেই জন্ম নেওয়ায় সে একজন মার্কিন নাগরিক।
গত ১৬ জুলাই, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বার্মিংহামের ICE অফিসে একটি রুটিন চেক-ইন করতে যান, যেটি নিয়মিত কার্যক্রম ছিল। কিন্তু সেই দিনটিই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ দিন।
কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস নেই
আইনজীবীর ভাষ্য মতে, শিশুটির পিতার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ব্যক্তিকে রুটিন সাক্ষাতের সময় আটক করা হচ্ছে, তিনিও তাদেরই একজন। বর্তমানে তাকে আলাবামার একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে এবং সেখান থেকে লুইজিয়ানার একটি কেন্দ্রে স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শীঘ্রই গুয়াতেমালায় ফেরত পাঠানো হবে। পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আইনজীবী ফাসকিং বলেন, “এই বিচ্ছেদ পরিবারটির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে এবং আরও পড়বে। শিশুটি এখন কেমোথেরাপির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সে তার বাবার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এই বাবা তার মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসেন।”
ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্টে ফাসকিং লিখেছেন, তিনি এক অফিসারকে অনুরোধ করেন, “এই অসুস্থ শিশুটিকে কি অন্তত তার বাবার সঙ্গে বিদায় জানানোর সুযোগ দেওয়া যায়?” প্রথমে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে তার হৃদয়বিদারক অনুরোধে অফিসার শেষমেশ সম্মতি দেন।
ফাসকিং জানান, তিনি গাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে আসেন, সূর্যের তীব্র আলো থেকে চোখ ঢেকে, তার নরম, দুর্বল দেহ বুকে আগলে ধরে তাকে বাবার কাছে নিয়ে যান। “আমি বাইরে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম,” বলেন তিনি।
বাবার শেষ কথা ছিল: “দুঃখ করো না”
বাবা তার অন্য দুই সন্তান—১৩ ও ১০ বছর বয়সী—কে বলেন, “দুঃখ করো না।” তাদের সঙ্গেও তিনি বিদায় জানান।
মা জানান, মেয়েটির লিউকেমিয়া ধরা পড়ে গত ডিসেম্বর মাসে। তিনি বলেন, “সপ্তাহে দুইবার কেমোথেরাপি নিতে হয়। অনেক সময় সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, জ্বর হয়, জটিলতা দেখা দেয়।”
আইনজীবী বলেন, শিশুটির বাবা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। গত চার বছর ধরে একই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন তিনি।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রেক্ষাপটে অভিবাসন নীতির মানবিক দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
নোভা