
ছবি: সংগৃহীত
চোখ যে মনের কথা বলে—এই কথাটি শুধু কবিতা বা গানেই নয়, আজ তা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। মুখে কিছু না বললেও মানুষের চোখের দৃষ্টি বলে দিতে পারে তার মনের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, ভয়, রাগ, মান-অভিমান, এমনকি সে সত্য বলছে নাকি মিথ্যা—সবকিছু। এই দৃষ্টি, এই পিউপিল—যা চোখের মনি নামে পরিচিত, বদলায় মনের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, চোখের পিউপিলের আকার—ছোট-বড় হওয়া—সম্পূর্ণ নির্ভর করে মানুষের মানসিক অবস্থা এবং তারা যা বলছে তার সত্য-মিথ্যার উপর। আর অবাক করা বিষয় হলো, এই চোখের আচরণ নিয়ে ১৪০০ বছর আগে আল কোরআনে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
সুরা মুমিনের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ চোখের চুরি সম্পর্কেও জানেন এবং যা কিছু অন্তরে গোপন রাখা হয় সেটাও।”
প্রশ্ন হচ্ছে, এই "চোখের চুরি" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে দেখা যায়, চোখের পিউপিল সবসময় এক আকারে থাকে না। এটি নিয়ন্ত্রিত হয় Autonomic Nervous System (ANS) দ্বারা, যা আমাদের অনিচ্ছাকৃত শরীরক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্নায়ুতন্ত্র দুটি অংশে বিভক্ত:
Sympathetic Nervous System – যা সক্রিয় হয় উত্তেজনা, ভয় বা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে।
Parasympathetic Nervous System – যা কাজ করে শান্ত, বিশ্রাম ও হজমের সময়।
যখন একজন মানুষ মিথ্যা বলেন, তখন তার শরীরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। এই উদ্বেগ Sympathetic Nervous System কে সক্রিয় করে, যা চোখের মনি বা পিউপিল বড় করে ফেলে। এই অবস্থাকে বলে Pupil Dilation বা Mydriasis। এ সময় চোখের ভেতরের একটি বিশেষ পেশি সংকুচিত হয়ে যায় যেন আশপাশ ভালো করে দেখা যায়।
অন্যদিকে যখন একজন মানুষ সত্য বলেন বা শান্ত থাকেন, তখন সক্রিয় হয় Parasympathetic Nervous System, এবং এতে পিউপিল ছোট হয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলে Miosis।
সারকথা, যখন চাপ বা ভয় কাজ করে তখন চোখের মনি বড় হয়, আর শান্ত থাকলে ছোট হয়। এটি মানুষ চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
তবে চোখের অপরাধ শুধু মিথ্যা বলাতেই সীমাবদ্ধ নয়। চোখের আরেক অপরাধ হলো পরনারী বা পরপুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত। মুফাসসিরগণ তাফসীরের কিতাবে লিখেছেন, এই দৃষ্টি মনের গোপন বাসনার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। দৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মনে কল্পনা আসে। যতক্ষণ তা মুহূর্তিক কল্পনা থাকে ততক্ষণ শাস্তিযোগ্য নয়, কিন্তু যখন তা দৃঢ় পরিকল্পনাতে পরিণত হয়, তখন তা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এইসব কিছু বিবেচনায় রেখে বলা যায়—আপনি হয়তো একজন দক্ষ মিথ্যাবাদী হিসেবে শরীরের ভাষা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু স্নায়ুতন্ত্র এবং চোখের পিউপিলকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে।
আর এ কারণেই আল্লাহ বলেন—
“তোমরা হয়তো মানুষের কাছ থেকে তোমাদের অন্যায় গোপন রাখতে পারো। কিন্তু আল্লাহ তো জানেন চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন কথাও।”
এভাবেই বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক গবেষণা আর কোরআনের প্রাচীন বাণী এক বিন্দুতে এসে মিলে যায়।
শেখ ফরিদ