ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

এনসিপি নেতা সালেহ উদ্দিন সিফাত

‘সেই পাইলটের জন্য যদি রাষ্ট্রীয় ফিউনেরাল আয়োজন করা যায়, তাহলে এই মাসুম বাচ্চাদের জন্যও রাষ্ট্রের উচিত নিদেনপক্ষে একটা প্রতীকী কালেক্টিভ ফিউনেরালের আয়োজন করা’

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:৩৬, ২৩ জুলাই ২০২৫

‘সেই পাইলটের জন্য যদি রাষ্ট্রীয় ফিউনেরাল আয়োজন করা যায়, তাহলে এই মাসুম বাচ্চাদের জন্যও রাষ্ট্রের উচিত নিদেনপক্ষে একটা প্রতীকী কালেক্টিভ ফিউনেরালের আয়োজন করা’

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেছেন, ‘বিমান বাহিনীর সেই পাইলটের জন্য যদি রাষ্ট্রীয় ফিউনেরাল আয়োজন করা যায়, তাহলে এই মাসুম বাচ্চাদের জন্যও রাষ্ট্রের উচিত নিদেনপক্ষে একটা প্রতীকী কালেক্টিভ ফিউনেরালের আয়োজন করা।’

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য সালেহ উদ্দিন সিফাত এনসিপি নেতা সালেহ উদ্দিন সিফাত ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘১.

উত্তরার দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও প্রকাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো মুখপাত্রকে দেখা যায়নি। ফলে মাইলস্টোন স্কুলের মতো একটি অত্যাধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী লাশ গুমের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হলেও সেটার সত্যাসত্য নিরূপণ এবং প্রকাশে ব্যর্থ ইন্টেরিম।

২.

একটি রাষ্ট্র কী পরিমাণ জবাবদিহিতাহীন হলে রানা প্লাজা ট্রাজেডির পরও এই ধরণের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো ‘স্ট্যান্ডার্ড ইমার্জেন্সি রেস্পন্স টিম’ এবং সেটা অপারেট করার জন্য একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল’ সেট করা হয়নি। যার ফলে জনগণ এই ধরনের দুর্যোগ দেখলে অনেক সময় নিজেরাই উদ্ধারকার্যে নেমে আসে। এর জন্য জনগণকে দোষারোপ করে লাভ নেই। আগে সাইক্লোন-ঘূর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ মারা যেতো। কিন্তু উপজেলায় উপজেলায় ‘সাইক্লোন সেন্টার’ নির্মাণের পর থেকে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে নাগরিকদেরকে অন্ততঃ ‘সাইক্লোন সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়ার ইন্সট্রাকশন দেওয়া যায়। এটাই স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আকারে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকার মতো মেট্রোপলিটন সিটিতে এই ধরণের পরিস্থিতিতে কোন কোন বাহিনী কীভাবে কাজ করবে সে নিয়ে কোনো আদর্শ প্রটোকল নাই। অন্যদিকে, উৎসুক কিংবা সাহায্য করতে আসা জনগণকে নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ফোর্স। এই ধরনের সিভিল ইস্যু ডিল করে সাধারণত পুলিশ কিংবা রাজনৈতিক নেতারা। এটা আরো বাজে ইম্প্যাক্ট ফেলেছে।

৩.

শিক্ষার্থীদের এরকম সামষ্টিক বেদনার মুহুর্তে শিক্ষা উপদেষ্টা যে পরীক্ষা স্থগিতকরণের মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলেন, তার দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে। মন্ত্রী হওয়ার পর আদতেই আবরার স্যাররা সোনার হরিণ হয়ে গেছেন। তাঁদেরকে এখন খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ ফ্যাসিবাদী আমলে যখন অধিকারের পাশে তেমন কেউ ছিল না, তখন আমরাই দাঁড়িয়েছিলাম। অনেকে শিক্ষাসচিবের গোয়ার্তুমির কথা বলছেন। কিন্তু সিদ্দিক জোবায়ের কিংবা মোখলেসদের মতো এরকম জনবিচ্ছিন্ন ও কথা না শোনা সচিবদের সরাতে পারেন না কেন উপদেষ্টা? উপদেষ্টাদের খুঁটির জোর এতো কম হলে তা প্রকাশ করুন। কথা শোনে না এরকম সচিবকে সরাতে না পারলে মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকার কী দরকার? ইতোপূর্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনতে পাঠানো হয়েছিল তথ্য উপদেষ্টা জনাব মাহফুজ আলমকে। এবারও জনাব মাহফুজ আলমকে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে নিজে গিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের পরামর্শ দিতে হয়েছে। এভাবে ছাত্র উপদেষ্টাদের বারবার সংকট মোকাবেলায় ঠেলে দিয়ে নিজেরা আরামের চেয়ারে থাকবেন আর কয়দিন?

আম্মা বা’দ। এই পুরো ঘটনায় ইন্টেরিমের ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। তবে এটা এই ব্যর্থতা স্ট্রাকচারালও বটে। আশ্চর্যজনকভাবে, এই ঘটনায় বিমান বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তেমন প্রশ্ন উঠে নাই। কেন এরকম পুরোনো ধ্বজভঙ্গ বিমান এখনো ঢাকার আকাশে উড়ে? এই ধরনের বিমান উড়ার কথা সাগরের আশপাশে। এটা পুরা রাষ্ট্রের স্ট্রাকচারাল প্রবলেম। এই বিপদের শঙ্কা অনেকদিন ধরেই ঝুলছিল ঢাকাবাসীর ঘাড়ে।

শুরুতে বলছিলাম এই পুরো ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে কোনো রিলায়েবল স্পোকসপার্সন ছিল না। অথচ হাস্যকরভাবে দেখা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ থেকে তাঁর কোনো পিআরও হঠাৎ ডোনেশন চেয়ে বসেছেন। এই ধরনের সমন্বয় ও কাণ্ডজ্ঞানহীন পিআরওকে এখনই স্যাক করা উচিত।

৪.

আন্দোলনের পর মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া দুই উপদেষ্টা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীদের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা একটা পক্ষ সচিবালয়ের পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। সচিবালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা ইতোমধ্যে এদের একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সিনিয়র রিপোর্টার পিন্টু ভাইও লিখেছেন - যারা সচিবালয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের কাছ থেকে দাবি-দাওয়া জানতে চেয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারে নাই।

ফলে জনগণের এমন সামষ্টিক বেদনার মুহুর্তকে পলাতক ফ্যাসিবাদীরা যে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাচ্ছে, তা প্রমাণিত। লাশ গুমের গুজবকে ক্যাশ করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগ সচিবালয়ে আঘাত করেছে। এই স্যাবোটাজকারীদের ছাত্র-জনতাই প্রতিহত করবে, ইনশাআল্লাহ! ইতোমধ্যে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা সেই কাজটি করেছে।

৫.

এতোগুলো মাসুম শিশু ঝরে গেছে অকালে। তারা জানেও না তাদের দোষটা কী! আমি মনে করি, বিমান বাহিনীর সেই পাইলটের জন্য যদি রাষ্ট্রীয় ফিউনেরাল আয়োজন করা যায়, তাহলে এই মাসুম শহীদ বাচ্চাদের জন্যও রাষ্ট্রের উচিত নিদেনপক্ষে একটা প্রতীকি কালেক্টিভ ফিউনেরালের আয়োজন করা। বিমান বাহিনীকে এই ঘটনায় তদন্তপূর্বক জবাবদিহি করতে হবে। ইন্টেরিমের প্রেস সচিবদের ব্যর্থতাও আমরা দেখলাম। উপদেষ্টা পর্ষদের ব্যাপারে রিথিংক করতে হবে অবশ্যই। জনবিচ্ছিন্ন উপদেষ্টা, যারা পিপলের সামনে সঠিক সময়ে দাঁড়াতে পারে না, যারা জনগণকে বুঝতে পারে না; তাদেরকে উপদেষ্টা পর্ষদ ছাড়তে হবে। একইসাথে, এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘স্ট্যান্ডার্ড ইমার্জেন্সি রেস্পন্স টিম এবং প্রটোকল’ প্রণয়ন করতে হবে।’

 

সূত্র: https://www.facebook.com/share/p/19MrFHB5sF/

রাকিব

×