ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এই সরকারকে কৈফিয়ত দিতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২২ জুলাই ২০২৫

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এই সরকারকে কৈফিয়ত দিতে হবে

ছবিঃ সংগৃহীত

ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সন্তানহারা অভিভাবকদের চোখের জলে আল্লাহর আরশ কাঁপছে। আমরা চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না।

তিনি বলেন, এমন দুর্ঘটনায় দায়-দায়িত্ব কার? জবাব দেবে কে? দুর্ঘটনা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় হতে পারে। সড়ক ও নৌপথে দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনা ও দুর্যোগে মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। দুর্ঘটনার সাথে দুঃশাসনের সম্পর্ক আছে। দুঃশাসন থাকলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। যখন কেউ নিয়ম-কানুন মানে না, সঠিকভাবে শাসন চলে না, তখন দুর্ঘটনার সিরিয়াল হতে থাকে। এতে দুর্ভোগ ও দুর্নীতি বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান্য হলো কাউকে ফ্যাসিবাদ আর কাউকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তার পেছনে লেগে থাকা। লাখ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি চলছে। আবার বলছে—বিচার হবে, সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন হবে। আসলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। কারণ, দেশে নির্বাচিত বা গ্রহণযোগ্য সরকার নেই। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে, এমন সরকার বর্তমানে নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে সামাজিক স্থিতিশীলতা আসে না। সামাজিক স্থিতিশীলতা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হয় না। আবার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে না। দেশের বেকার সমস্যা ভয়াবহ, জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়ে আছে। মানুষের আয় কমে গেছে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে কয়েকশ’ কারখানা বন্ধ হয়ে পারে। আরও কয়েক লাখ মানুষ বেকার হতে পারে। সরকার বলেছে, দেশের রিজার্ভ অনেক ভালো। কারণ, খরচ হচ্ছে না, উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে না। জিডিপির উন্নয়ন নেই, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নেই। মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ নেই। সামাজিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে না। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। রাস্তায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ফ্যাসিবাদ আখ্যা দিয়ে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষে-মানুষে ঘৃণা, হিংস্রতা ও শত্রুতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের পতনের পর দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। শান্তি-শৃঙ্খলায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এই সরকার জাতিকে বিভক্ত করেছে। প্রতিদিন দেশের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার—যে নির্বাচনে সরকারি দল বলে কোনো দল থাকবে না। বর্তমান সরকারের কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিলে জনগণ তা প্রতিহত করবে। কারণ, দেশের মানুষ চায় নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। এই সরকারের কোনো দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, সরকারকে নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ বলা যাবে না। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, একটি দল সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আসলে কে সরকার চালাচ্ছে তা জাতির কাছে পরিষ্কার নয়। দুর্নীতিতে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে, পোস্টিং নিয়ে দুর্নীতি চলছে। দুর্নীতি চলছে আগের মতই, তাহলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এত মানুষ জীবন দিলো কেন? মঙ্গল করতে চাইলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করুন। শত্রুতা বন্ধ করে বন্ধুত্ব করুন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা নিজেদের দলকে বাদ দিন। তাদের হাঁটতে দিন, হাঁটতে শিখতে দিন। তবে সরকারের কোন দল নির্বাচনে থাকতে পারবে না।

নির্বাচন নিয়ে তিনি আরও বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হলেই দেশ এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে পারবে। সবার মধ্যে আতঙ্ক—কে কাকে শেষ করে দেয়। এমন আতঙ্কের জন্য কি জুলাই আন্দোলন হয়েছিল? আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলাম। দেশের বিশাল অংশ ঐ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো। আজ ছাত্ররা শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও অপমান করছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না, সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা। মানুষ জানে না বিপদে কার কাছে যাবে। আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চাই, সরকার চাইলে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমরা জনগণের পক্ষে আছি, আমরা জনগণের জন্যই কাজ করবো। আমরা ভয় পাই না, আমাদের ভয় দেখাবেন না। জীবন দিতে হলেও আমরা জনগণের পাশেই থাকবো। হত্যা করবেন? বুক পেতে দিয়েছি, হত্যা করুন। তবুও দেশের মানুষকে মুক্তি দিন। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেফতার হলে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। একটা মানুষ দোষী সাব্যস্ত না হলে তাকে আসামি বলতে পারেন না। দোষী প্রমাণ হওয়ার আগে অবশ্যই জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এই সরকারকে কৈফিয়ত দিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া ও মাহফিলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

এসময় বক্তৃতা করেন:
জাতীয় পার্টি মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, আব্দুর রশিদ সরকার, এড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মমতাজ উদ্দিন, আজমল হোসেন লেবু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, নুরুজ্জামান জামান, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, এম এ সোবহান, আক্তার হোসেন দেওয়ান, হুমায়ুন খান, যুগ্ম মহাসচিব সামসুল হক, আব্দুল হামিদ ভাসানী, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, দ্বীন ইসলাম শেখ, মীর সামসুল আলম লিপটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মনসুর, কাজী আবুল খায়ের, মিজানুর রহমান মীরু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এলাহান উদ্দিন, ইব্রাহিম খান জুয়েল, মোড়ল জিয়াউর রহমান, ক্বারী ইছারুহুল্লাহ আসিফ, আবু ওয়াহাব, মোঃ ইউসুফ, শেখ সারোয়ায়, ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা সামসুদ্দিন রিন্টু, মশিউর রহমান, আবু নাসের বাদল, হুমায়ুন কবির শাওন, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আসাদুজ্জামান খান আসাদ, মুকুল রাঙ্গাবালী, জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স, নাজমুল হাসান রেজা, ম্যাক্স রানা, মটর শ্রমিক নেতা আব্দুর রহিম।

ইমরান

আরো পড়ুন  

×