ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে আশার আলো: প্লাস্টিকখেকো ছত্রাকের সন্ধান মিলল যে দেশে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৩ জুলাই ২০২৫

বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে আশার আলো: প্লাস্টিকখেকো ছত্রাকের সন্ধান মিলল যে দেশে

ছবি: সংগৃহীত

সিনথেটিক প্লাস্টিক ভেঙে খাওয়া মিঠাপানির ছত্রাকের সন্ধান মিলেছে জার্মানির এক হ্রদে, যা প্লাস্টিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে—বিশেষত সিনথেটিক প্লাস্টিক পলিউরেথেন। লিবনিজ ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার ইকোলজির বিজ্ঞানীরা এই আশাব্যঞ্জক আবিষ্কার করেন। গবেষকেরা বলছেন, এই বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক প্লাস্টিক হজম করে শুধু টিকে থাকেই না, বরং কোনো অতিরিক্ত পুষ্টি ছাড়াই জৈব বস্তু উৎপাদন করতেও সক্ষম।

জার্মানির ‘লেক স্টেচলিন’ নামক মিঠাপানির হ্রদে এই ছত্রাকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষণার দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞানী হ্যান্স-পিটার গ্রোসার্ট জানিয়েছেন, এ ধরনের ছত্রাক বিশেষ কিছু সিনথেটিক পলিমারের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে এবং কার্বনের অন্য কোনো উৎস ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। জলজ পরিবেশে প্লাস্টিকের প্রাচুর্যের কারণে এরা নিজেদের অভিযোজিত করে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষণায় ১৮টি ছত্রাক প্রজাতির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর মধ্যে চারটি ছত্রাক পলিউরেথেন প্লাস্টিক ভাঙতে বিশেষভাবে দক্ষ। উল্লেখ্য, পলিউরেথেন একটি বহুল ব্যবহৃত সিনথেটিক প্লাস্টিক, যা ফোম এবং বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে শক্ত ধরনের প্লাস্টিক যেমন পলিথিন বা টায়ার ভাঙার ক্ষেত্রে ছত্রাকগুলো ততটা কার্যকর নয়।

তবে বিজ্ঞানীদের আশা, এই ছত্রাক ভবিষ্যতে সরাসরি সমুদ্র বা জলাশয়ে ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ কমানো সম্ভব হবে। যদিও এ নিয়ে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ, প্লাস্টিক-ভাঙা এনজাইমের কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে তাপমাত্রা ও পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতির ওপর।

বিশ্বে বর্তমানে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনঃব্যবহারযোগ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। এই অবস্থায় ছত্রাক কিংবা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক ধ্বংসের পথ খুঁজে বের করতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০টিরও বেশি প্লাস্টিক-ভক্ষণক্ষম ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই নতুন গবেষণা একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধে আশার আলো দেখাচ্ছে, অন্যদিকে তা ভবিষ্যতের টেকসই পৃথিবীর জন্য সম্ভাবনার এক দ্বারও খুলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×