ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বাদাম বেশি খেলে হতে পারে লুকানো ৫টি স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৩ জুলাই ২০২৫

বাদাম বেশি খেলে হতে পারে লুকানো ৫টি স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবিঃ সংগৃহীত

বাদামকে আমরা সাধারণত সুপারফুড বা পুষ্টির খনিজ ভাণ্ডার হিসেবে জানি। এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা হৃদযন্ত্র, রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ, ওজন ব্যবস্থাপনা ও প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।

কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে যেকোনো ভালো খাবারই শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বাদামও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিন অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে কিছু গোপন এবং ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে, যেমন খনিজ শোষণে বাধা, হজমে সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, বিষক্রিয়া, এবং এলার্জি ও ওষুধের প্রতিক্রিয়া।

এখানে বাদাম বেশি খাওয়ার ৫টি গোপন নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হলো:

১. খনিজ শোষণে বাধা
বাদামে রয়েছে ফাইটিক অ্যাসিড ও উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা শরীরের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষত যারা নিরামিষভোজী বা বাদাম নির্ভর খাদ্যগ্রহণ করেন, তাদের জন্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে।

২. হজমে সমস্যা
প্রতিঅউন্স বাদামে থাকে ৩–৪ গ্রাম ফাইবার। অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া ও যথেষ্ট পানি না খেলে তা হজমপ্রণালীতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. ওজন বৃদ্ধি
প্রতিঅউন্স বাদামে রয়েছে প্রায় ১৬০ ক্যালরি ও ১৪ গ্রাম ফ্যাট। প্রতিদিন কয়েক আউন্স বাদাম খেলে না বুঝেই অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ হয়ে যেতে পারে, যা ধীরে ধীরে ওজন বাড়ায়। বাদামের দুধ, ময়দা বা বাটার—এই রূপেও অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

৪. ভিটামিন ই-এর বিষক্রিয়া ও রক্তজমাট বাধায় সমস্যা
প্রতিঅউন্স বাদামে রয়েছে প্রায় ৭–৮ মি.গ্রা. ভিটামিন ই, যা একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক চাহিদার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন ই গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, দৃষ্টিস্বচ্ছতা হ্রাস, পেটের সমস্যা এবং রক্তজমাট বাঁধার সমস্যা হতে পারে। রক্ত পাতলাকারী ওষুধ গ্রহণকারী ও রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্তদের জন্য এটি বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ।

৫. গোপন ঝুঁকি: কিডনি স্টোন, বিষক্রিয়া ও অ্যালার্জি
অক্সালেট: বাদামে উচ্চমাত্রার অক্সালেট থাকে, যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিডনি স্টোন তৈরি করতে পারে।

বিটার (তিক্ত) বাদাম: তিক্ত বা বুনো বাদামে থাকে অ্যামিগডালিন, যা খেলে সায়ানাইড উৎপন্ন হয়। এটি শ্বাসকষ্ট, স্নায়বিক অচলতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

অ্যালার্জি: বাদাম অ্যালার্জি হঠাৎ দেখা দিতে পারে, এমনকি নিয়মিত খাওয়ার পরেও। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বা রক্তচাপ হ্রাসজনিত মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সমাধান: পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস
সর্বোত্তম উপকার পেতে প্রতিদিন ১০–১৫টি বাদামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। খাওয়ার আগে বাদাম ভিজিয়ে বা খোসা ছাড়িয়ে খেলে হজম ভালো হয় এবং অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট হ্রাস পায়। পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং বাদামের পাশাপাশি অন্য বাদাম ও বীজ খেয়ে পুষ্টিতে বৈচিত্র আনুন। তিক্ত বাদাম একেবারে এড়িয়ে চলুন এবং যাদের কিডনি, থাইরয়েড বা রক্তজমাট সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাদাম গ্রহণ করুন।

সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া 

নোভা

×