
ছবি: জনকণ্ঠ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পাঁচ মাস পার হলেও অচলাবস্থা কাটেনি। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চাইলেও শিক্ষকরা এখনো ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্তে আসেননি। অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। এদিকে, রবিবার (২০ জুলাই) কুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এবং সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রবিবার (২০ জুলাই) সকালে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস শুরুর অপেক্ষা করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাসে ফেরেননি। অন্যদিকে একই দিনে ক্লাস শুরুর অনুরোধ জানিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান এ চলমান সংকটের সমাধান কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে ক্লাসে না যাওয়ার কারণ এবং বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে কথা হয়েছে।
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.এস.এম. কাসেম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক সচিব এবং সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানি মণ্ডল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসরুর আলীকে সদস্য করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ দাবি নিয়ে কুয়েটে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ইতিহাসে বিরল। একজন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে শিক্ষকরাও ভয় পাচ্ছেন। শিক্ষকরা চান সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ। পাঠদানের পরিবেশ চান তারা। শিক্ষার্থীরা তো তাদেরই সন্তান। তবে একটা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত না করা পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কেউ নিরাপদ না এখন।
১৯ ব্যাচের তানিম হাসান বলেন, ৫ মাস ধরে আমাদের পরীক্ষা, ক্লাস বন্ধ আছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখন অভিভাবকরাও চিন্তিত। তারা চাতক পাখির মত চেয়ে আছে তাদের সন্তানের দিকে। তারা চিন্তিত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইন্টারিম সরকারের কুয়েটকে নিয়ে অবহেলায় শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ৫ মাস সময় লেগেছে তদন্ত কমিটি গঠন করতে। ২ মাস সময় দেওয়া হয়েছে তদন্তের জন্য। তার মানে কি আর ২ মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষা উপদেষ্টা যদি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখতে না পারে তাহলে পদত্যাগ করুক। পাঁচ হাজারেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা দরকার নাই আমাদের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনী—গরীব সবাই পড়ে। কিন্তু সবার পারিবারিক সামর্থ্য এক নয়। অনেকেই চাকরি বা উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছে শুধু একটি পরীক্ষার অপেক্ষায়।
২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজানুর রহমান বলেন, পাঁচ মাস আমাদের লেখাপড়া বন্ধ। অনেক আশা নিয়ে মা—বাবা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তারাও এখন চিন্তিত। আমরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তাদের অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন জানান, শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা হয়েছে। উপাচার্য ছাড়া অচলাবস্থা কাটবে না। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পরই সব কার্যক্রম শুরু হবে। এখন ক্লাস শুরুর জন্য ছাত্র—শিক্ষক সবাই এক জায়গায় আছি। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
এর আগে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে চলছে অচলাবস্থা। শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। গত ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানায় কুয়েট শিক্ষক সমিতি। এরপর গত ২১ মে ড. মো. হযরত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে অচল অবস্থায় রয়েছে কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ। অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম এবং আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
আবির