
২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে চালু হতে যাচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। ইতোমধ্যেই ১৬টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই এই শিক্ষাক্রম চালু করলে আবারও ব্যর্থ হতে পারে উদ্যোগটি।
বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০১২ সালে সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে। মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি বিকাশে এই পদ্ধতি কার্যকর হলেও দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হয়নি বলে মত অনেক শিক্ষাবিদের। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুনরায় সেই শিক্ষাক্রম ফিরে আসে।
সরকার এখন যে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে, তাতে নৈতিক, মানবিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে। এজন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, চীনসহ ১৬টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেশের শিক্ষাপদ্ধতি অনুসন্ধান ও সমস্যা সমাধানভিত্তিক। ফিনল্যান্ডে শিক্ষার্থীরা বাস্তবজীবনের সমস্যার সমাধানে শেখে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অঞ্চলভিত্তিক স্বাধীন মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু, আর চীনে নৈতিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তবে বাংলাদেশে এসব পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের অভাব, অনুপযুক্ত ক্লাসরুম পরিবেশ, এবং রাজনৈতিক মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, কেবল কারিকুলাম বদল নয়, তার আগে একটি যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি দরকার, যা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। বর্তমান শিক্ষানীতিতে বহু অসঙ্গতি ও ফাঁকফোকর থাকায় সেটিকে ভিত্তি করে নতুন কারিকুলাম কার্যকর করা সম্ভব নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, “একবারেই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে আমরা রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছি। এনসিটিবির সাথে একাধিক বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
অভিভাবকরাও চান না এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা নোট বই ও কোচিং বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করবে। তারা চান একটি মানবিক, অনুসন্ধানভিত্তিক, এবং বাস্তবজীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা।
Jahan