ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

কিডনি ক্যান্সারের উপসর্গ: সাবধান হোন এই ৭ লক্ষণে

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ২২ জুলাই ২০২৫

কিডনি ক্যান্সারের উপসর্গ: সাবধান হোন এই ৭ লক্ষণে

ছবি: সংগৃহীত

কিডনির ক্যানসার বা রেনাল সেল কারসিনোমা ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, তবে অনেক সময় এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ আর নিরীহ মনে হয় যে মানুষ তা উপেক্ষা করে চলে। দৈনন্দিন ক্লান্তি, সামান্য ব্যথা, ওজন কমে যাওয়াএসব ঘটনা প্রায়ই আমরা ব্যস্ত জীবনের ধকল বলেই মনে করি। অথচ এগুলোই হতে পারে ভেতরে জমে থাকা একটি প্রাণঘাতী রোগের ইঙ্গিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা অনেকটাই সহজ হয়। তাই দেরি না করে এই সাতটি ‘গোপন’ উপসর্গের প্রতি নজর দিন।

১. প্রস্রাবে রক্তচোখে পড়ে না অনেক সময়

প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে অনেকেই তা ইউরিনারি ইনফেকশন বা কিডনিতে পাথরের লক্ষণ ভেবে এড়িয়ে যান। তবে কিডনি ক্যানসারের ক্ষেত্রে অনেক সময় microscopic hematuria বা অতি ক্ষুদ্র রক্তক্ষরণ হয়, যা চোখে দেখা যায় না, শুধু মূত্র পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে।

এ ধরনের রক্তপাত কখনো হয়, কখনো হয় নাফলে সহজেই অবহেলিত হয়ে যায়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, এটি কিডনির ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু অবহেলিত লক্ষণগুলোর একটি।

২. কোমর বা পাশে হঠাৎ ব্যথা, যা থেকে যায়

কোমর ব্যথা মানেই যে বসে কাজ করার কারণে হয়েছে, তা নয়।

কিডনির ক্যানসার অনেক সময় পাঁজরের নিচে পাশে একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা ব্যথার সৃষ্টি করে, যা বিশ্রামে বা পজিশন বদলালে কমে না। এটি সাধারণ পেশির ব্যথা নয়, বরং টিউমার আশপাশের টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করলে এই ধরণের ব্যথা হতে পারে।

৩. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া অনেকেই ইতিবাচক মনে করলেও এটি হতে পারে একটি সতর্কতা সংকেত।

কিডনির ক্যানসার শরীরের মেটাবলিজমে পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে চর্বি ও পেশি নষ্ট হতে থাকে। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, হঠাৎ ও ব্যাখ্যাতীত ওজন কমে যাওয়া রেনাল ক্যানসারসহ অনেক ধরনের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।

৪. কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিনের হালকা জ্বর

ঠান্ডা, ভাইরাস, কিংবা মানসিক চাপএইসব কারণেই সাধারণত হালকা জ্বর হয়। কিন্তু কিডনির ক্যানসারের ক্ষেত্রে এমন জ্বর হতে পারে কোনো ইনফেকশন ছাড়াই।

এই জ্বরটি মাঝে মাঝেই ফিরে আসে, সঙ্গে থাকে ক্লান্তি আর অস্বস্তি। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের টিউমারের প্রতি প্রতিক্রিয়ার ফল হতে পারে।

৫. অস্বাভাবিক মাত্রার ক্লান্তি

রোজকার ক্লান্তি নয়ক্যানসার-সম্পর্কিত ক্লান্তি শরীরের গভীর থেকে আসে এবং বিশ্রামেও কমে না।

কিডনির টিউমার erythropoietin হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যায় ও অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। এর ফলে দেখা দেয় প্রচণ্ড দুর্বলতা ও নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা।

৬. পেটে বা পাশে অস্বাভাবিক ফোলাভাব বা গাঁট

হালকা পেট ফাঁপা ভেবে অনেকেই পাত্তা দেন না, কিন্তু কিডনি টিউমার যখন বড় হয় তখন তা পাশে বা নিচের অংশে দৃশ্যমান ফোলাভাব বা শক্ত গাঁট তৈরি করতে পারে।

এটি সাধারণত নড়াচড়া করে না এবং ব্যথাও নাও থাকতে পারে। অনেক সময় এটি দেহের গঠন বা ওজন বাড়ার ভুল ধারণা তৈরি করে।

৭. ঘামে ভেজা বিছানা: রাতের ঘাম

বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তন বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রাতের ঘাম দেখা দেয়। তবে কিডনির ক্যানসারে দেখা যেতে পারে অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত রাতের ঘাম।

এই ঘাম এতটাই বেশি হতে পারে যে বারবার জামা-কাপড় বা বিছানার চাদর বদলাতে হতে পারে। এটি শরীরের ভিতরে থাকা একটি ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত।

উল্লিখিত উপসর্গগুলোর কোনোটি যদি আপনার মাঝে দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায়, তাহলে অবহেলা না করে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। আগেভাগে শনাক্ত হলে ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার পথ অনেকটাই সহজ হয়।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×