ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

যারা দিনে ৮ ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ!

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৫:২৫, ২২ জুলাই ২০২৫

যারা দিনে ৮ ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ!

ছ‌বি: প্রতীকী

আধুনিক জীবনে আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে বসে কাজ করি। অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, ঘরে ফিরে আবার সোফায় বসে টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহার করা – এসব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই অভ্যাসের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা বলছেন, যারা দিনে ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় চেয়ারে বসে থাকেন, তাদের হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। এতে রক্তে চর্বি জমে যেতে পারে এবং ধমনিতে ব্লক তৈরি হয়। এই ব্লকই একসময় হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং এমনকি ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।

আমাদের শরীর এমনভাবে তৈরি যে, এটি নিয়মিত নড়াচড়া ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে সুস্থ থাকে। বসে থাকার সময় আমাদের পেশিগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে শরীরের ক্যালরি খরচ কমে যায়। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় থাকলে ওজন বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত ওজন নিজেই একটি বড় ঝুঁকি, যা হার্টসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

অফিসের কর্মীরা প্রায়ই ৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় এক জায়গায় বসে কাটিয়ে দেন। একটানা কাজের চাপে তারা অনেক সময় হাঁটাহাঁটি করতেও ভুলে যান। কিছু মানুষ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও দেরি করেন, কারণ কাজ ছেড়ে উঠতে তাদের অনীহা থাকে বা তারা চাপে থাকেন। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় চেয়ারে বসে থাকেন, তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এমনকি তারা যদি সপ্তাহে এক-দুবার ব্যায়াম করেন, তবুও এই ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বসে থাকার সময় যত দীর্ঘ হবে, হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ তত বাড়বে।

এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হলো – কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু উঠে হাঁটা, স্ট্রেচিং করা, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা, ফোনে কথা বলার সময় হাঁটাহাঁটি করা এবং দিনে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করা। অফিসে এক জায়গায় বসে কাজ করলেও প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর পর ২-৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা বা একটু হেঁটে আসা দারুণ উপকারি। ছোট এই পরিবর্তনগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া কর্মস্থলে বসার অবস্থানও ঠিক হওয়া দরকার। সঠিক উচ্চতায় চেয়ার ও ডেস্ক না হলে পিঠ, কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘদিন এই ভুল অঙ্গবিন্যাসের কারণে শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা পরোক্ষভাবে হৃদপিণ্ডের ওপর প্রভাব ফেলে।

প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে চেয়ারে বসে কাজ করা একান্ত প্রয়োজনীয় হলেও আমাদের উচিত সচেতন থাকা। ‘সেডেন্টারি লাইফস্টাইল’ এখন একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার কথা ভেবে এখন থেকেই বসে থাকার সময় কমানো, শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো এবং সক্রিয় জীবনযাপন অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। মনে রাখতে হবে, হার্ট আমাদের শরীরের প্রাণকেন্দ্র। একে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। যত বেশি সক্রিয় থাকব, তত বেশি সুস্থ থাকব। তাই আজ থেকেই শুরু হোক ছোট পরিবর্তন, যার ফল মিলবে দীর্ঘমেয়াদে।

এম.কে.

×