
ছবি: সংগৃহীত
হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি, যা প্রতিনিয়ত রক্ত পাম্প করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। অথচ, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস এই মূল্যবান অঙ্গটির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্টকে পাহাড়ের মতো শক্ত ও সুস্থ রাখতে হলে রাতের খাবারে মাত্র একটি জিনিস বাদ দিলেই বিস্ময়কর ফল পাওয়া যেতে পারে। সেই একটি জিনিস হলো – প্রক্রিয়াজাত এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার (Processed and High-Fat Foods)।
আধুনিক জীবনযাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন – ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, হিমায়িত খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যেমন – অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাজাভুজি, বার্গার, পিজ্জা ইত্যাদি রাতের খাবারে খুব জনপ্রিয়। দ্রুত তৈরি করা যায় এবং সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই এসবের প্রতি ঝুঁকছেন। কিন্তু এই খাবারগুলো হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে।
কেন প্রক্রিয়াজাত এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
১. উচ্চ সোডিয়াম: প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। রাতের বেলায় অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে কিডনিকে বেশি কাজ করতে হয়, যা পরোক্ষভাবে হার্টকেও প্রভাবিত করে।
২. ক্ষতিকর চর্বি (ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট): ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই অস্বাস্থ্যকর ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহার করা হয়। এই ফ্যাটগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়, যা ধমনীতে প্লাক জমাতে সাহায্য করে এবং হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। রাতের বেলায় এই ধরনের খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং শরীর ঘুমানোর সময়ও চর্বি প্রক্রিয়াকরণে ব্যস্ত থাকে।
৩. অতিরিক্ত চিনি: অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো চিনি থাকে, যা শুধু স্থূলতা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না, হার্টের ওপরও সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চিনি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৪. কম পুষ্টিগুণ: প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে না বললেই চলে। পুষ্টির অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হার্টের সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাতের খাবারে কী খাবেন?
রাতের খাবার হালকা এবং পুষ্টিকর হওয়া উচিত। এটি হজম হতে সহজ এবং হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না এমন খাবার হতে হবে। কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প নিচে দেওয়া হলো:
সবজি ও ডাল: বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ বা হালকা সবজি কারি এবং ডাল প্রোটিন ও ফাইবারের ভালো উৎস।
হালকা প্রোটিন: গ্রিলড বা বেকড মাছ, মুরগির মাংস (চর্বি ছাড়া), বা পনির।
গোটা শস্য: লাল আটার রুটি বা ব্রাউন রাইস, যা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।
ফল: হালকা ফল যেমন – আপেল, কলা বা পেঁপে।
রাতের খাবারে প্রক্রিয়াজাত এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত রাখবে এবং আপনাকে একটি সুস্থ ও সক্রিয় জীবন উপহার দেবে। আপনার হার্টের সুস্থতার জন্য আজই এই পরিবর্তনটি আনুন।
ফারুক