
ছবি: সংগৃহীত।
একটা সময় ছিল, যখন এফ-৭ যুদ্ধবিমান ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজেট-বান্ধব আকাশ প্রতিরক্ষার অন্যতম ভরসা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধবিমান প্রযুক্তিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের ধাক্কায় বহু আগেই বাতিল হয়ে গেছে এই মডেলটি। বর্তমানে বিশ্বে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়া — এই দুই দেশেই এফ-৭ বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু কেন?
সাম্প্রতিক ঢাকায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে থাকা পুরনো ও প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা এই বিমানটি। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় একটি জনবহুল স্কুল ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে একটি F-7BGI যুদ্ধবিমান। এতে পাইলট শহীদ হন এবং অন্তত ১২ জন আহত হন। এটি বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বিমানটি সম্পর্কে যা জানা গেছে:
-
মডেল: F-7BGI
-
মূল উৎপাদনকারী দেশ: চীন (Chengdu Aircraft Corporation)
-
উৎপাদন বন্ধ: ২০১৩ সালেই এই মডেলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
-
বাংলাদেশে যুক্ত: ২০১১-২০১৩ সালের মধ্যে ৩৬টি F-7 যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:
“এই এয়ারক্রাফটগুলো এখন কার্যত অচল। আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।”
উড্ডয়নের পর মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী, পাইলট সময় পেলে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে অন্য কোথাও জরুরি অবতরণ করতে পারতেন। বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলট প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত ফ্লাইট সময় — সবগুলো ক্ষেত্রেই ঘাটতি থাকার আশঙ্কা করছেন তারা।
কেন এখনো চলছে?
অর্থনৈতিক বাস্তবতা:
আধুনিক যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি অত্যাধুনিক ফাইটার স্কোয়াড্রন গড়তে খরচ হতে পারে হাজার কোটি টাকা। সরকার একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্যন্ত নতুন স্কোয়াড্রন কেনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
বিকল্প অভাব ও ট্রেনিং প্রয়োজন:
অনেক পাইলট থাকলেও পর্যাপ্ত ফ্লাইট নেই, ফলে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও হয় না। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়ানো না গেলে দক্ষ পাইলট তৈরি করাও কঠিন।
রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি:
যদিও বলা হয় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত একটি ফাইটার জেট কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না।
কেন এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি?
-
যুদ্ধবিমান শুধু যুদ্ধ নয়, বরং প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ।
-
বাংলাদেশে প্রতি ৫-৬ বছরেই ঘটে যাচ্ছে এফ-৭-এর বড় দুর্ঘটনা।
-
নতুন যুদ্ধবিমান সংগ্রহ না করলে ট্রেনিং ও সক্ষমতার ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি তৈরি হবে।
বাংলাদেশকে শুধু ‘পুরনো চলছে’ এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে আকাশ প্রতিরক্ষায় আধুনিকীকরণের পথে দ্রুত এগোতে হবে। শুধুমাত্র ব্যয় সংকোচনের কারণে নিরাপত্তা ও প্রাহানির ঝুঁকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় — বিশেষত যেখানে প্রতিরক্ষা বাহিনী আমাদের সর্বশেষ নিরাপত্তা-বলয়।
নুসরাত