ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মার্টিন লুথার কিং হত্যাকাণ্ডের ২৩০,০০০ পৃষ্ঠার গোপন নথি প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২২ জুলাই ২০২৫

মার্টিন লুথার কিং হত্যাকাণ্ডের ২৩০,০০০ পৃষ্ঠার গোপন নথি প্রকাশ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত এক বিরাট পরিমাণ নথি প্রকাশ করেছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এফবিআই’র নজরদারি ফাইল, যা ১৯৭৭ সাল থেকে আদালতের আদেশে জনসাধারণের জন্য বন্ধ ছিল।

মোট ২৩০,০০০ পৃষ্ঠার এই নথি দীর্ঘ তিন দশক ধরে সরকারি স্থাপনায় মজুত ছিল। কিংয়ের জীবিত দুই সন্তান নথি প্রকাশের বিরুদ্ধে ছিলেন। তারা তাদের পিতার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার জন্য এই নথিগুলো অপব্যবহারের চেষ্টা নিন্দা জানিয়েছেন। মার্টিন তৃতীয় এবং বার্নিসে কিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই নথিগুলো দেখার সময় সহানুভূতি, সংযম এবং পরিবারের শোকের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে।

 

১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্যের মেমফিস শহরে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র গুলিবিদ্ধ হন। তখন তিনি মাত্র ৩৯ বছর বয়সী ছিলেন। কিং ছিলেন একজন বিশিষ্ট নাগরিক অধিকার নেতৃস্থানীয় বাপ্টিস্ট পাদ্রি, যিনি বর্ণবৈষম্য ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন পরিচালনা করতেন। মেমফিসের একটি মোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকাকালে তাকে গুলি করা হয়। ওই আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মারা যান।

ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত হিসেবে জেমস আর্ল রে নামের একজন পেশাদার অপরাধীকে গ্রেফতার করে। রে হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষ স্বীকার করে ৯৯ বছর কারাদণ্ড পান। কিন্তু পরে তিনি তার দোষ স্বীকারের কথা প্রত্যাহার করেন এবং দাবি করেন যে তিনি ভুল করে দোষ স্বীকার করেছিলেন এবং তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

তবে হত্যাকাণ্ডের আসল পরিকল্পনাকারী ও প্রকৃত নেপথ্য কাহিনী নিয়ে নানা ধরনের রহস্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডে সরকারের গভীর কোনো অংশ জড়িত ছিল। মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যুর পর আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন আরও তীব্র ও ব্যাপক আকার নেয় এবং তার আত্মত্যাগে মানুষ বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।

জেমস আর্ল রের মৃত্যুর পরও হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য ও আসল নায়কের খোঁজ এখনো সবার জন্য সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি।

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় এশাসিনেশনের নথি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি জানুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশে মার্টিন লুথার কিং, জন এফ কেনেডি ও রবার্ট এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথি মুক্ত করার নির্দেশ দেন।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক কার্যালয় (ডিএনআই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, "এমএলকে নথিগুলো আগে কখনো ডিজিটাল করা হয়নি এবং বহু বছর ধরে সরকারি দপ্তরে জমে ছিল।"

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি বলেছেন, "আমাদের জাতির মহান নেতাদের এক জনের হত্যাকাণ্ডের দশক পর মানুষ উত্তর পাওয়ার যোগ্য।"

তবে ট্রাম্পের সমালোচকরা বলেছেন, এসময় এই নথি প্রকাশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলমান যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা।

তবে কিং পরিবারের সব সদস্য এই প্রকাশকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না। কিংয়ের আত্মীয় আলভেদা কিং বলেছেন, "আমি ট্রাম্প ও ডিএনআই’র স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাহত হলেও এই নথির প্রকাশ সত্য উদঘাটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।" 

মুমু ২

×