ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরিতে বয়সভিত্তিক বৈষম্য, দুই প্রজন্মই কোণঠাসা!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২২ জুলাই ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরিতে বয়সভিত্তিক বৈষম্য, দুই প্রজন্মই কোণঠাসা!

ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে তীব্র দক্ষতা সংকট চলছে, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বহু নিয়োগকারী বয়স্ক এবং তরুণ এই দুই প্রজন্মের কর্মীদের নিয়োগে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। অস্ট্রেলিয়ান এইচআর ইনস্টিটিউট (AHRI) এবং অস্ট্রেলিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের যৌথ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, এখন প্রায় এক চতুর্থাংশ এইচআর পেশাদার ৫১ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের ‘বয়স্ক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করছেন, যেখানে ২০২৩ সালে এ হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। অথচ এ বয়সী কর্মীরা অনেকটাই কর্মক্ষম ও অভিজ্ঞ। এতে বোঝা যায়, কর্মদক্ষতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বহু নিয়োগকারী অভিজ্ঞদের উপেক্ষা করছেন।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, পূরণযোগ্য শূন্যপদ থাকলেও মাত্র ৫৬ শতাংশ নিয়োগকারী ৫০-৬৪ বছর বয়সীদের নিয়োগে আগ্রহী। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এই হার নেমে এসেছে ২৮ শতাংশে, আর ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সরাসরি এই বয়সীদের নিয়োগ না দেওয়ার কথা বলেছে।

অন্যদিকে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। মাত্র ৪১ শতাংশ নিয়োগকারী এই তরুণ কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।

AHRI-এর প্রধান নির্বাহী সারাহ ম্যাকক্যান-বার্টলেট বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান ৫০ বছর বয়স না হতেই কর্মীদের 'বুড়ো' হিসেবে দেখছে। আবার ২৪ বছরের নিচের তরুণদেরও দক্ষতার ঘাটতির অজুহাতে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”

জরিপে অংশ নেওয়া এইচআর পেশাদারদের ২০ শতাংশ স্বীকার করেছেন যে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বয়স্ক কর্মীদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার ২৩ শতাংশ একই কথা বলেছেন তরুণ কর্মীদের বেলায়।

এই গবেষণা “Older and Younger Workers: What Do Employers Think?” শিরোনামে প্রকাশিত হয় এবং এটি AHRI ও হিউম্যান রাইটস কমিশনের পঞ্চম জাতীয় জরিপ। এতে সরকারি, বেসরকারি এবং অলাভজনক খাতের প্রায় ১৫০ জন এইচআর পেশাদার অংশ নেন।

অস্ট্রেলিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বয়স-বৈষম্য কমিশনার রবার্ট ফিটজজেরাল্ড বলেন, “বয়সভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বয়স বৈচিত্র্য যুক্ত টিমগুলো সমস্যা সমাধানে বেশি সক্ষম এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত বয়স নয়, দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাকে গুরুত্ব দেওয়া।”

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বয়স্ক কর্মীরা বিশ্বস্ততা (৭৪ শতাংশ), নির্ভরযোগ্যতা (৬৪ শতাংশ) এবং মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার দক্ষতায় (৬২ শতাংশ) এগিয়ে থাকলেও, প্রযুক্তি ব্যবহারে ও কর্মউদ্দীপনায় পিছিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। মাত্র ১ শতাংশ তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতায় এগিয়ে মনে করেন এবং ৭ শতাংশ মনে করেন তাদের উচ্চ শক্তি আছে।

অন্যদিকে, তরুণরা প্রযুক্তিতে দক্ষ হলেও, বিশ্বস্ততা, নির্ভরযোগ্যতা ও চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আস্থার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ৬০ শতাংশ এইচআর পেশাদার মনে করেন, বয়স্ক কর্মীরা অবসর নেওয়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হারিয়ে গেছে, অথচ মাত্র ১৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এই জ্ঞান সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ সম্প্রতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকে দ্বিতীয় মেয়াদের মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং আগস্টে একটি জাতীয় রাউন্ড টেবিল আলোচনার ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে এইসব সংকট ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।

মুমু ২

×