
ছবি: সংগৃহীত
গত এক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয়েছে অগণন বেদনার অধ্যায়। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে, দেশজুড়ে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা জাতিকে শোকাহত করেছে। ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে দুর্ঘটনা ও সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিটি মৃত্যুই কারো মা, কারো সন্তান, কারো ভাই বা বোনের চিরবিচ্ছেদ। একটি জাতি যেন ক্রমাগত হারাচ্ছে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
ছাত্র আন্দোলনে রক্তাক্ত রাজপথ
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে প্রাথমিক উত্তেজনা: ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের কোটা বাতিল রায় নিয়ে শুরু হয়, শেষ পর্যায়ে ছিল ১৫ জুলাই–৫ আগস্ট পর্যন্ত উত্তাল প্রেক্ষাপট ।
সর্বোচ্চ সহিংসতা: ১৬ জুলাই থেকে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে চলা বিক্ষোভে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে বৃহৎ প্রভাব পড়েছে ।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানীতির সংস্কার এবং বেকারত্বের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন। ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রামের প্রবর্তক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, এবং সারা দেশের বড় বড় শহরগুলিতে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাজপথে নামেন।
সরকারি ও বেসরকারি বাহিনীর দমননীতির ফলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের মতে, এই সময়ে মৃত: ৮০০–১,৪০০ এরও অধিক, আহত: ১৮,০০০ – ২০,০০০ এরও অধিক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা: শিশুদের নিঃশেষ হওয়া
২১ জুলাই ২০২৫, দুপুর ১:০৬ এ একটি Bangladesh Air Force F‑7 BGI প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরা থেকে বার্ষিক অনুশীলন শেষে উঠার পর মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ভবন ধাক্কা মেরে
জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৫০ থেকে ২০০ জন শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত হয় আরও অনেকে, যাদের অনেকে এখনো মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা: ২২ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোকের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
গোপালগঞ্জে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
২০২৫ সালের জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা। দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৪ জন, আহত হন শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। অঞ্চলজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এখনো।
এই এক বছরে ঘটে যাওয়া প্রতিটি দুর্ঘটনা যেন কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি ঘটনা একটি পরিবারের ভাঙন, একটি সমাজের চরম ক্ষয়। শিশুদের মৃত্যুর খবরে দেশের প্রতিটি অভিভাবক দুঃসহ আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ছাত্র আন্দোলনে নিহত তরুণদের মা-বাবা আজও চোখের জলে ভাসেন।
একজন আহত ছাত্রের মায়ের আর্তনাদ — "আমার ছেলে শুধু দেশের জন্য সত্য বলেছিল, এখন সে শয্যাশায়ী। আমি কী অপরাধ করেছিলাম?" — এ যেন গোটা জাতির অভিভাবকদের মনের ভাষা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সমস্ত ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ একাধিক সংস্থা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এই এক বছরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা কেবল শোকের নয়, জাতির সামনে বড় এক প্রশ্নচিহ্নও ছুঁড়ে দিয়েছে—আমরা কোথায় যাচ্ছি? এভাবে যদি জাতির মেধা, সম্ভাবনা, শিশু ও তরুণেরা ঝরে পড়ে, তবে আগামী দিনের নেতৃত্ব কে দেবে? এ প্রশ্নের জবাব এখনই জাতিকে ভাবতে হবে।
আবির