ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

হাওরের বুকে একদিন আমরা ক’জন: নিকলি, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে ভ্রমণ

মো. বদরুল আলম বিপুল

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২০ জুলাই ২০২৫

হাওরের বুকে একদিন আমরা ক’জন: নিকলি, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে ভ্রমণ

বাংলাদেশের হৃদয়ে বিস্তৃত হাওরাঞ্চল যেন প্রকৃতির এক খোলা গ্যালারি, যেখানে আকাশ মিশে যায় পানিতে, আর মানুষ হারিয়ে যায় নিঃশব্দ এক আহ্বানে। চারপাশে শুধু জলরাশি আর নীল আকাশ—এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের টানেই ছুটে যান ভ্রমণপিপাসুরা। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। তেমনই এক ভ্রমণ ছিল আমাদের—নিকলি, মিঠামইন আর অষ্টগ্রাম ঘুরে দেখা।

গত শনিবার কাকডাকা ভোরে টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে বাইকে রওনা দিই হাওরের বুকে—যেখানে জল আর আকাশ মিশে গেছে এক বিন্দুতে। নিকলির ঘাটে নামতেই চোখে পড়ে সারি সারি নৌকা। ঘাট থেকে নৌকায় উঠতেই খুলে যায় এক ভিন্ন জগতের দ্বার। হাওরের শীতল বাতাস আর চোখজুড়ানো বিস্তীর্ণ জলরাশি যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। নৌকায় বসে চলি মিঠামইনের পথে—বাতাসে জলের গন্ধ, সামনে মুক্ত জলরাশি।

বিস্তীর্ণ পথে চোখে পড়ে জেলের মাছ ধরার দৃশ্য, দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো পাতিহাঁস ও রাজহাঁস, দূরে গবাদিপশুর পাল, হাওরের বুক চিরে চলা ছোট ছোট নৌকা আর সবুজ দ্বীপের মতো ভাসমান গ্রাম।

মিঠামইনে পৌঁছেই মনে হলো—প্রকৃতি যেন তার সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। শহরের কোলাহল থেকে শত মাইল দূরে, নেই কোনো গাড়ির হুইসেল কিংবা কল-কারখানার অবাঞ্ছিত আওয়াজ—মিঠামইন যেন নিঃশব্দ এক শান্তির নাম। সদ্য নির্মিত মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলি সড়ক হাওরের বুকে এক অনন্য বিস্ময়। দু’পাশে শুধু পানি আর পানি—মাঝে সরু রাস্তা। রাস্তার পাশে গাছ থাকলে সৌন্দর্য আরও বাড়ত—তবু এমন পথ যেন স্বপ্নের দিকে যাত্রা।

অষ্টগ্রামে এসে ভ্রমণের পূর্ণতা পেলাম। এখানকার জীবনযাত্রা, সহজ-সরল মানুষ ও স্থানীয় বাজার ভ্রমণে বাড়তি রঙ যোগ করে। এখানকার মানুষ প্রকৃতিনির্ভর—বর্ষায় মাছ ধরে, শুকনায় কৃষিকাজ করে। কোনো এক গ্রামের চাচীর হাতে রান্না হাওরের বাহারি মাছের পদ—তাদের হাসি ও আতিথেয়তায় মন ভরে যায়।

কথা বলেছিলাম অষ্টগ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তারের সঙ্গে, যার বাড়ির চারপাশে শুধু পানি। মেইন রাস্তা থেকে তার বাড়ি খানিকটা দূরে। তিনি বলেন, “বাজারে যাই নৌকায় বা সাতার কেটে।” বাড়ির সামনে মাচাং করে তিনি পোলট্রি মুরগি পালন করেন বাড়তি আয়ের জন্য।

তার স্ত্রী জমিলা বেগম মাটির চুলায় ভাত বসাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “কষ্ট হয়, তবু মানিয়ে নিয়েছি।” জিজ্ঞেস করতেই দেখালেন কিছু মাছ—নিজেই বঁড়শি দিয়ে ধরেছেন।

সোনামিয়া নামে আরেকজন তার বাড়ির সামনে জাল দিয়ে বেড়া দিয়ে মাছ পালন করছেন—এটিই তার বাড়তি আয়ের উৎস।

একদিনের ভ্রমণ হলেও এ অভিজ্ঞতা থাকবে চিরস্মরণীয়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মানুষের প্রাণবন্ত জীবনযাত্রা দেখতে একবার হলেও ঘুরে আসুন নিকলি-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম।

সানজানা

×