ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

৫ বার মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছিল পৃথিবী, এবার মানুষই কি সেই পরবর্তী শিকার?

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৪, ২০ জুলাই ২০২৫

৫ বার মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছিল পৃথিবী, এবার মানুষই কি সেই পরবর্তী শিকার?

ছবি: সংগৃহীত।

আপনি কি জানেন, এই পৃথিবী একাধিকবার প্রাণহীন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছিল? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীতে অন্তত পাঁচবার ঘটে গেছে গণবিলুপ্তি বা Mass Extinction, যার প্রতিবারই প্রাণীকুলের অর্ধেক বা তারও বেশি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দিকে—আর এবার এর জন্য দায়ী মানুষ নিজেই।

প্রথম গণবিলুপ্তি: বরফ যুগে ডুবে গিয়েছিল প্রাণ

প্রথম গণবিলুপ্তির প্রমাণ মেলে অর্ডোভিশিয়ান যুগে, আজ থেকে প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন বছর আগে। সেই সময় প্রাণীরা মূলত সমুদ্রে বসবাস করতো। কিন্তু হঠাৎ করে শুরু হয় বরফ যুগ। দুই মেরু অঞ্চলে বরফ বাড়তে থাকে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমে যায়। সেই সঙ্গে তৈরি হয় বরফের স্তর। এত শীতল পরিবেশের জন্য প্রাণীরা প্রস্তুত ছিল না। ফলে ৮৬ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।

দ্বিতীয় গণবিলুপ্তি: গাছপালাই হয়ে দাঁড়ায় বিপদের কারণ

দ্বিতীয় গণবিলুপ্তি ঘটে ডেভোনিয়ান যুগে, ৩৬০ মিলিয়ন বছর আগে। এই সময়ে বহু প্রাণী সমুদ্র ছেড়ে স্থলভাগে আসে। কিন্তু পৃথিবীতে গাছপালার দ্রুত বিস্তারের কারণে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমে যায় এবং অক্সিজেন বাড়ে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। গরমে অভ্যস্ত প্রাণীরা ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। এতে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়।

তৃতীয় গণবিলুপ্তি: পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়

পার্মিয়ান এক্সটিনকশন ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। আজ থেকে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে এই ঘটনা। এ সময় ৯৬% সামুদ্রিক এবং ৭০% স্থলচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশাল আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং সালফার বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে সৃষ্টি হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও অ্যাসিড বৃষ্টি।

চতুর্থ গণবিলুপ্তি: আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত নিঃসরণে প্রাণীর পতন

ট্রায়াসিক যুগে, ৮০% প্রাণী বিলুপ্ত হয়। গবেষকরা মনে করেন, সমুদ্রের তলদেশে থাকা আগ্নেয়গিরির একযোগে বিস্ফোরণ এই ঘটনার জন্য দায়ী। যদিও কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে সেই সময় কিছু প্রাণী টিকে যায়, যার মধ্যে ছিল ডাইনোসরের পূর্বপুরুষ, কুমির, ও কচ্ছপ।

পঞ্চম গণবিলুপ্তি: এক গ্রহাণু মুছে দেয় ডাইনোসরদের

৬৫ মিলিয়ন বছর আগে মহাকাশ থেকে এক বিশাল গ্রহাণু বর্তমান মেক্সিকোতে আছড়ে পড়ে। এতে ব্যাপক ধ্বংস হয়, সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি বহু বছর ধরে। গাছপালা মারা গেলে তৃণভোজী ডাইনোসর এবং পরে মাংসাশীরাও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ধারণা করা হয়, ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হতে ১–২ বছর সময় লেগেছিল।

ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি কি চলছে এখনই?

বিশ্বের বহু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে মানবসভ্যতা। এর পেছনে দায়ী মানুষ নিজেই। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, বনভূমি ধ্বংস, নগরায়ন, কীটনাশক ব্যবহার, দূষণ—সবই বিশ্ব পরিবেশকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডাইনোসরের মতো মানুষও কি বিলুপ্ত হবে?
নাকি এবার মানুষই পারবে বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে?

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×