
ছবি:সংগৃহীত
ওয়ারেন বাফেট – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী, যাঁকে সবাই “Oracle of Omaha” নামে চেনে – শুধু তাঁর সম্পদের জন্য নয়, তাঁর জীবনের সরলতা, শৃঙ্খলা ও মানবিক বোধের জন্যও বিখ্যাত। কিন্তু এই যাত্রার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল তাঁর তরুণ বয়সে।
তিনি জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন ৩০ বছর হওয়ার আগেই। এই অভ্যাসগুলো আজকের তরুণ ভারতীয়দের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। নিচে তাঁর জীবনের সেই ৫টি মূলমন্ত্র তুলে ধরা হলো যা আপনি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন:
আগেই খুঁজুন নিজের প্যাশন
ওয়ারেন বাফেট মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম শেয়ার কেনেন। বিশের কোঠায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনি ব্যবসায় ও আর্থিক রিপোর্ট পড়ায় এতটাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন যেন সেগুলো ছিল তাঁর অ্যাডভেঞ্চার গল্প। তিনি সবসময় বলেন, "নিজের ওপর বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ।"
ছাত্রদের উচিত ছোট ছোট আগ্রহ নিয়ে পরীক্ষা করা — কবিতা লেখা, গান শেখা, কোডিং, মেকানিক্স, এমনকি AI সম্পর্কেও জানা। বাবা-মা ও কর্মজীবী মানুষদের উচিত ভাবা, কোন কাজটি করলে মন খুশি হয় – গল্প বলা? রান্না? গান? — আর সে কাজটা সময় বের করে করা।
👉 প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট দিন এমন কিছু শেখায় বা করতে, যেটা আপনাকে টানে।
সম্পর্ক গড়ুন, শুধু সম্পদ নয়
ওয়ারেন বাফেট ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেন। গুরু মানতেন বেঞ্জামিন গ্রাহামকে, আর দীর্ঘ ৬৫ বছর ছিলেন চার্লি মঙ্গার-এর বন্ধু ও সহকর্মী। তিনি বলেন, "আপনার আশেপাশের মানুষদের থেকে আপনি প্রভাবিত হবেন। তাই এমন মানুষ বেছে নিন যাঁদের আচরণ আপনি অনুসরণ করতে চান।"
পারিবারিক খাবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো — এগুলো আপনার ভিত মজবুত করে। শিক্ষার্থীরা সিনিয়র বা শিক্ষকের পরামর্শ নিক। ব্যবসায়ীরা যেন এমন গ্রাহকদের খোঁজেন যাঁদের সঙ্গে তাঁদের মানসিক মিল আছে।
আজই তিনজন এমন মানুষের নাম লিখুন যাঁদের আপনি সম্মান করেন — অন্তত একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- "না" বলা শিখুন
ওয়ারেন বাফেট বলেন, "সফল মানুষরা প্রায় সবকিছুতেই ‘না’ বলে দেয়। কারণ তারা জানে তাদের সময় কোথায় ব্যয় করতে হবে।"
পারিবারিক অনুষ্ঠান, অতিরিক্ত কাজ, সামাজিক চাপ — এ সব কিছুর মধ্যেও কখন ‘না’ বলতে হবে সেটা জানা জরুরি।
প্রতিদিনের অগ্রাধিকার ঠিক করুন – যদি কোনো কাজ তার সঙ্গে না মেলে, নম্রভাবে না বলুন। যেমন, “আমার সময়টা অন্য কাজে লাগছে, পরে দেখা হবে।”
সহজ জীবন যাপন
বাফেট এখনও সেই পুরোনো বাড়িতে থাকেন যেখানে তিনি ১৯৫৮ সালে ছিলেন। তিনি বলেন, "ব্যয় করার পরে যা থাকে তা সঞ্চয় করবেন না। বরং সঞ্চয় করার পরে যা থাকে তা ব্যয় করুন।"
বড় উৎসব, মহা বিবাহ, দামি ফোন — এগুলো না থাকলেও জীবন থেমে যায় না। বরং নিজের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে পারলে মানসিক শান্তি বাড়ে।
এই সপ্তাহে একবার হলেও একটি অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন। তার বদলে বাড়িতে একটি গেম নাইট করুন, বা নতুন কিছু শিখুন।
ফিরিয়ে দিন সমাজকে
ওয়ারেন বাফেট বলেন, "আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান ১%-এর একজন হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি ৯৯%-এর কথা ভাবা আপনার কর্তব্য।"
ছোট্ট কিছু দিয়েই শুরু করুন — যেমন রিকশাচালককে এক কাপ চা খাওয়ানো, পুরনো বই কাউকে উপহার দেওয়া, বা আপনার কলেজে একটি গেস্ট লেকচার দেওয়া।
প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার অন্যকে সাহায্য করার জন্য কিছু করুন। শুধু অর্থ নয়, আপনার সময়, মনোযোগ, ভালোবাসাও কাউকে অনেক কিছু দিতে পারে।
Buffett-এর জীবন থেকে শিক্ষা — এখনই শুরু করুন!
ভারতের তরুণ প্রজন্ম আজ অসম্ভব ব্যস্ত — পড়াশোনা, চাকরি, পরিবার, EMI… কিন্তু Warren Buffett আমাদের শেখান: নিজের ভিত মজবুত করুন, আগ্রহ খুঁজে বের করুন, সম্পর্ক গড়ুন, জীবনকে সহজ রাখুন এবং কিছু ফিরিয়ে দিন।
“আজকের ছায়াটা আছে, কারণ কেউ বহু বছর আগে একটা গাছ লাগিয়েছিল।” — এই কথার মতোই, আপনি আজ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেটাই নির্ধারণ করবে আপনার আগামী জীবন।
আজই করুন পাঁচটি কাজ:
- নিজের আগ্রহ খুঁজুন: ১০ মিনিট দিন কিছু নতুন শেখায়।
- সম্পর্ক গড়ুন: কাউকে ফোন করুন, মন থেকে কথা বলুন।
- না বলুন: নিজের সময় সুরক্ষিত রাখুন।
- সরল থাকুন: বাড়িতেই একসাথে সিনেমা দেখুন।
- কিছু দিন: কাউকে সাহায্য করুন, সেটা সময় হোক বা হাসি।
ওয়ারেন বাফেটের শিক্ষা কেবল কোটিপতিদের জন্য নয় — বরং আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য। যদি আপনি সত্যিকার অর্থে নিজের ভালো চাও, তবে জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলতে আজ থেকেই এগিয়ে আসুন।
মারিয়া