ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

হার মানতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, মার্কিন বাঙ্কার বাস্টার আটকানোর কৌশল আনলো চীন

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৩, ২০ জুলাই ২০২৫

হার মানতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, মার্কিন বাঙ্কার বাস্টার আটকানোর কৌশল আনলো চীন

ছবি: সংগৃহীত

নির্জন মরুভূমির আকাশে গভীর গর্জন—হঠাৎ করে কালো ধাতব দানবের মতো এক বোম্বার বিমান হাজির। তারপর বিকট শব্দে আকাশ কেঁপে ওঠে, বিস্ফোরণে মাটির গভীরে লুকানো বাঙ্কার গুঁড়িয়ে যায়।

এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে গত ২২শে জুন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমার বিমানগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ফেলে Massive Ordnance Penetrator (MOP) বা Mother of All Bombs।

এই বোমার নাম শুনলেই সামরিক বিশ্লেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কারণ এটি কোনো সাধারণ বোমা নয়। অত্যন্ত শক্তিশালী আর্মার কোটেড এই বোমা সহজেই ঢুকে পড়ে মাটির অনেক গভীরে থাকা বাঙ্কারে। তারপর সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দেয় সবকিছু।

কিন্তু এবার এই দানবীয় অস্ত্রকে থামাতে অভিনব এক কৌশলের কথা জানালেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনের নোরিনকো অধীনস্থ Northwest Institute of Mechanical and Electrical Engineering-এর গবেষক চুই সিংয়ের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল সম্প্রতি তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন Journal of Gun Launch and Control-এ।

তাদের ব্যতিক্রমী ধারণা হলো—MOP বোমার দুর্বল জায়গায় আঘাত হানতে হবে পাশ থেকে। কারণ, বোমার সামনের অংশ শক্তিশালী আর্মার দিয়ে আবৃত থাকলেও পাশের অংশে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পুরু পাতলা স্টিল।

গবেষকরা সুইজারল্যান্ডে তৈরি Oerlikon GDF বিমান বিধ্বংসী কামান ব্যবহার করে এই পদ্ধতি পরীক্ষা করেছেন। এই কামান মাত্র ২ সেকেন্ডে ছুড়তে পারে ৩৬টি গোলা। আর ১২০০ মিটার দূর থেকে এই কামানের সাহায্যে MOP বোমা ধ্বংসের সম্ভাবনা প্রায় ৪২ শতাংশ বলেই দাবি তাদের।

তবে গোলা ছুড়তে হবে সুনির্দিষ্ট কোণে, ঠিক ৬৮ ডিগ্রির নিচে। এর বেশি হলে গোলাগুলো বোমার গায়ে লাগলেও সেগুলো সরে গিয়ে পড়তে পারে পাশ দিয়ে।

বোমাটি যখন আকাশ থেকে ধেয়ে আসে, তখন গোলা ছোড়ার সঠিক মুহূর্ত নির্ধারণ করতে হয় প্রায় এক মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই। এমন নিখুঁত কাজ করতে হলে দরকার অত্যাধুনিক রাডার, কম্পিউটার আর দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল সিস্টেম, যা চীনের রয়েছে—কিন্তু ইরান বা অন্য ছোট দেশগুলোর নেই।

এই কৌশলকে বলা হচ্ছে Sniper Fire Control Tactics। আগেই বোমার গতিপথ হিসাব করে কামানকে ঠিক সেই বিন্দুতে তাক করে রাখতে হবে, যেখানে বোমাটির পৌঁছানোর কথা।

তবে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে এ কৌশল বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী বিমান বাহিনী প্রথমেই শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে, তারপরই বোমা ফেলে। এছাড়া স্মার্ট বোমাগুলো প্রায় গন্তব্যের কাছাকাছি এসে চূড়ান্ত গতিপথ বদলে ফেলে, ফলে আগেই টার্গেট করে রাখা পয়েন্টটা আর সঠিক থাকে না।

তবে চীন বলছে, এটা একেবারে অসম্ভব নয়। অন্তত চীনের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশে এই কৌশল প্রয়োগ করা সম্ভব।

বেইজিংয়ের একজন পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন—যা চীনে কাজ করে, তা সব দেশে কাজ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের বাস্তবতা অনেক জটিল। কিন্তু প্রতিটি নতুন গবেষণা ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এক ধাপ এগিয়ে দেয়।

MOP-এর মতো শক্তিশালী বোমাও হয়তো একদিন ঠেকানো সম্ভব হবে—সঠিক কৌশল, সঠিক প্রযুক্তি আর নিখুঁত পরিকল্পনায়।

 

শেখ ফরিদ 

×