ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

চীনের সেই বাঁধ নির্মাণ শুরু,মরুভূমি হবে বাংলাদেশও

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২০ জুলাই ২০২৫

চীনের সেই বাঁধ নির্মাণ শুরু,মরুভূমি হবে বাংলাদেশও

ছবি: সংগৃহীত

 ব্রহ্মপুত্র নদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে চীন। এই দৈত্যাকার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২০ লাখ ২০ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নির্মাণ শেষ হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের হাতে চলে আসবে এক জাদুর কাঠি—যার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশকে কথায় কথায় নাচাতে পারবে বেইজিং।

চীনের নির্মাণাধীন এই বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আপত্তি থাকলেও তা মোটেই আমলে নেয়নি চীন। এই বাঁধের প্রভাবে একদিকে যেমন সৃষ্টি হতে পারে প্রচণ্ড খরা, অন্যদিকে চাইলেই চীন তৈরি করতে পারে বিপর্যয়কর বন্যা। এর ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এখন শঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক সেই কৌশল এবার ভারতের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে পারে চীন। আর এই জটিল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশও পড়ে যেতে পারে চরম বিপদে।


ব্রহ্মপুত্র নদটি উৎপত্তি লাভ করেছে তিব্বতে হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গ থেকে। এরপর এটি ভারতের অরুণাচল ও অসম প্রদেশ হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। পরে যমুনা ও মেঘনা হয়ে এটি মিলিত হয় বঙ্গোপসাগরে। এই নদীটির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ ও ভারতের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোটি কোটি মানুষের জীবন ও কৃষি অর্থনীতি।

চীনে এই নদীকে বলা হয় ইয়ারলুং জাঙ্গবো।


শনিবার, হিমালয়ের পাদদেশে এই নদীর ওপর চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বাঁধ নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ইয়াং। এই অঞ্চলেই ছিল প্রাচীন ইয়ারলুং সভ্যতা, যেখানে প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

চীন প্রথম এই প্রকল্পের কথা প্রকাশ করে ২০২০ সালের নভেম্বরে। তাদের দাবি, ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনাই তাদের এই প্রকল্পের লক্ষ্য। যদিও পরিবেশবাদী গোষ্ঠী ও তিব্বতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে।


চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা ও নয়াদিল্লি উভয়ই এই প্রকল্প নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, চীন আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের বাঁধ ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহে প্রভাব ফেলবে না।

অপরদিকে ফেব্রুয়ারিতে ভারত জানায়, ভাটির দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে চীনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীনের নির্মিতব্য এই দৈত্যাকার বাঁধ শুধু একটি প্রযুক্তিগত বা পরিবেশগত প্রকল্প নয়, এটি হয়ে উঠছে একটি ভূরাজনৈতিক অস্ত্র। এর মাধ্যমে চীন ভবিষ্যতে পানিকে ব্যবহার করতে পারে কূটনৈতিক চাপ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে, যা বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

শেখ ফরিদ 

×