
সংগৃহীত প্রতীকী ছবি
মানুষ—এই প্রজাতির গর্ব, অহংকার, যশ, প্রতিপত্তি, ঐশ্বর্য, ক্ষমতা, শৌর্য–সবই একদিন নিঃশেষ হয়ে যায় মাটির নিচে। চোখ ধাঁধানো জীবন, দুর্নিবার উচ্চাশা, অগাধ সম্পদ, সমাজের কৌলীন্য—সবই এক অনিবার্য সত্যের মুখোমুখি হয়: মৃত্যু। মৃত্যু কখনো সময় দেয় না, কখনো কাউকে ছাড় দেয় না।
বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, মৃত্যুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই মানবদেহে শুরু হয় একটি ভয়াবহ প্রক্রিয়া। শরীরের কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে এবং দেহে জন্ম নেয় পচনকারি ব্যাকটেরিয়া ও কীটপতঙ্গ। পায়ুপথ থেকে শুরু হয় অপচয়, যার তীব্র গন্ধ এক অদ্ভুত সংকেত পাঠায় প্রকৃতির অন্যান্য পোকামাকড়ের উদ্দেশে। তারা ছুটে আসে মৃতদেহের দিকে, যেন এক নির্দিষ্ট আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছে। ধীরে ধীরে মৃতদেহের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি অঙ্গ, প্রতিটি মাংসপিণ্ড হয়ে ওঠে তাদের খাদ্য।
প্রথম তিনদিনেই নাকের গঠন ভেঙে যায়। ছয়দিনে খসে পড়ে নখ, নয়দিনে চুল। লোম ঝরে যায় একে একে। এরপর ১৭ দিন পেরোলে পেট ফেটে যায়, বেরিয়ে আসে দেহের ভেতরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। মাত্র ৬০ দিনে মৃতদেহের সব মাংস শেষ হয়ে যায়—একচুলও অবশিষ্ট থাকে না। তারপর আসে হাড়ের পালা। নব্বই দিন পর হাড়গুলো একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যায়। এক বছর শেষে মাটির সঙ্গে মিশে যায় মানবদেহের সর্বশেষ চিহ্নটুকুও।
কোথায় থাকে তখন সেই তেজস্বী কণ্ঠ? সেই যশস্বী কীর্তি? সেই অহংকারভরা পদচারণা? সমাজের উপরে থাকা নাম, পরিচয়, অর্থ, প্রতিপত্তি, এমনকি ভালবাসার সম্পর্কগুলোও এক এক করে সব পেছনে পড়ে থাকে।
তবু এই পৃথিবীর বুকে, মানুষ যেন ভুলে যায় নিজের প্রকৃত পরিচয়। অহংকারে ভরে উঠে হৃদয়, লালসা ও হিংসায় ভরে যায় মন, ক্ষমতা ও ধনের মোহে নিজেকে অমর ভাবতে শুরু করে। অথচ সত্য তো খুব নির্মম—মৃত্যুর পর পাঁচ থেকে সাত ফুট মাটির নিচে মানুষ হয়ে পড়ে নিঃস্ব, নীরব, নিশ্চুপ।
এই মৃত্যু আমাদের শেখায় বিনয়। মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের মূল উদ্দেশ্য—একটি সুন্দর, মানবিক, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণময় জীবন যাপন। যেখানে থাকবে না অহংকার, থাকবে না হিংসা, থাকবে কেবল পরস্পরের জন্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও আত্মোন্নয়নের অনন্ত প্রচেষ্টা।
তাই, আসুন—আমরা নিজেদের সংশোধন করি। প্রতিটি ভালো কাজ করার মনোবাসনা লালন করি। প্রতিটি মন্দ চিন্তাকে পরাভূত করতে সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনা করি। যেন আমাদের জীবন হয় অর্থপূর্ণ এবং মৃত্যু হয় গৌরবময় এক অবসান।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সবাইকে সত্য উপলব্ধির তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর
সাব্বির