ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কৃষিঋণ বিতরণে নিম্নমুখিতা উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২০ জুলাই ২০২৫

কৃষিঋণ বিতরণে নিম্নমুখিতা উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩ বছরের বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সম্মানজনক স্থানে থাকলেও (যেমন চাল উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, সবজি উৎপাদনেও বিশ্বে তৃতীয়, মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় আর চাষকৃত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে অবস্থান বিশ্বে ১১তম) গম, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ফল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা যা আমদানিনির্ভর, ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভরতার কাছাকাছি পৌঁছলেও তরল দুধ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে রয়েছে। উপাত্ত বলছে ১৯৭২-৭৩ সালে দেশে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন র্ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ টনে। এ সময় খাদ্যশস্যের উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ হারে, এতে উদ্বৃত্ত থাকার কথা অনেক খাদ্যশস্যের। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা অন্যরকম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফ.এ.ও) তথ্যানুসারে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে ১৪৯.৮ কেজি খাদ্যশস্য গ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশে যদি তার পরিমাণ ১৮২.৫ কেজি ধরা হয় এবং শতকরা ২৫ ভাগ বীজ, পশুখাদ্য ও অপচয় ধরা হয়, তাহলে মোট খাদ্য চাহিদা দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। এর চেয়ে অনেক বেশি চাল ও মোট খাদ্যশস্য প্রতিবছর আমরা উৎপাদন করছি, তার পরও কমবেশি প্রায় ১ কোটি টন চাল, গম ও ভুট্টা প্রতিবছর আমদানি করতে হচ্ছে যা ক্রমাগতই বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিনির্ভরতা যখন এত বেশি, তখন বৈশ্বিক মূল্য অস্থিরতা ও ঘাটতি অভ্যন্তরীণ বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা ছাড়া এ সংকট এড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কৃষিঋণ বিতরণ ও বিনিয়োগ একটি গুরুত্ব ভূমিকা পালন করতে পারে।
কৃষিঋণ বিতরণ ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি : দেশের কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্যনিরাপত্তা ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা ও কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনীহার ফলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো এখনো সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ২১৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করলেও ৩৮ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হলেও বেশিরভাগ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে সক্রিয় ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে এ পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ব্যাংক ৮ হাজার ৯৩ কোটি, বেসরকারি ব্যাংক ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি ও বিদেশি ব্যাংক ৭৮৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। তবে পারফরম্যান্সে বৈষম্য রয়েছে- কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকলেও পদ্মা ব্যাংক ও এইচএসবিসি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ৪ হাজার ৯১২ কোটি টাকা বিতরণ করে প্রথম স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ১ হাজার ৯৬২ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৮৮৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ৬৫১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৬১৭ কোটি ও পূবালী ব্যাংক ৬০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, যার বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৪৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ২১৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করলেও ৩৮ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হলেও বেশিরভাগ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে সক্রিয় ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে এ পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ব্যাংক ৮ হাজার ৯৩ কোটি, বেসরকারি ব্যাংক ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি ও বিদেশি ব্যাংক ৭৮৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। তবে পারফরম্যান্সে বৈষম্য রয়েছে- কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকলেও পদ্মা ব্যাংক ও এইচএসবিসি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে অংশ নিয়েছে, তবে কিছু ব্যাংকের অবস্থা হতাশাজনক। শরিয়াহভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক মাত্র ৪ কোটি ৮৯ লাখ, মধুমতি ব্যাংক ২ কোটি ৫০ লাখ এবং এইচএসবিসি ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে; যা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যের ১০ শতাংশের কম। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পদ্মা ব্যাংক ও বিদেশি ওরি ব্যাংক এক টাকাও কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ঋণের অন্তত ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে সেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার অর্থ বিতরণে ব্যর্থ হবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তহবিলে ওই অর্থ জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে প্রতিবছরই সাধারণ ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি ঋণ বিতরণ। এজন্য বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বছরের বারো মাস বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময়মতো ঋণ পান।  
খাতওয়ারি বিতরণ : কৃষি ঋণ বিতরণের উপখাতভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার মোট কৃষিঋণ বিতরণে শস্যের অবদান গত অর্থবছরের ৪৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪৩ শতাংশে। আর দারিদ্র্য দূরীকরণে ঋণ বিতরণের অংশ ৮ শতাংশ নেমে এসেছে ৪ শতাংশে। তবে মোট ঋণ বিতরণে মৎস্য এবং পশুপালন ও পোলট্রি খাতের বিতরণের অবদান গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এদিকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গ্রামীণ ব্যাংক এবং বড় ১০টি এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কৃষি খাতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৭১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এনজিওগুলো ঋণ বিতরণের প্রভাব ঠিক রাখতে পারলেও পিছিয়ে পড়েছে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো।
ঋণ বিতরণে বন্যা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রভাব : সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় কৃষিঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরও বেশি করে কৃষিঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে জোর না দেওয়ায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে। যদিও ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, জুলাই-আগস্টের অস্থিরতা ও ব্যাংক খাতে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অনিশ্চয়তার প্রভাবে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষিতে ঋণপ্রবাহ কমলেও সামনের দিনগুলোয় তা আবারও বাড়বে। এ ব্যাপারে কৃষি অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন ‘সাম্প্রতিক দুটি বন্যা এবং খরাসহ নানা উপদ্রবে এবার কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বন্যা-উত্তর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবার আরও বেশি করে ঋণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না থাকায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। ফলে রবি মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আমদানি নিশ্চিতের পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে ডলার সংকট। তাই সার্বিক কৃষিপণ্য সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দিতে পারে।’ এ ব্যাপারে ব্যাংকারদের মন্তব্য হলো জুলাই-আগস্টে সার্বিক ঋণ প্রভাব কমে এসেছিল। তখন মানুষ বের হতে পারেনি। আবার ১০-১২ ব্যাংক কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল। তারাও তখন ঋণ দিতে পারেনি। তাই সার্বিক কৃষিঋণ বিতরণে এটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু কৃষিঋণের টার্গেট দেওয়া থাকায় এটা আমাদের দিতেই হবে। আগামীতে আশা করছি ঋণ বিতরণ বাড়বে।’ কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহকে একটি বড় প্রভাবক বলে মনে করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের, তদের মতেঋণ না পেলে প্রান্তিক কৃষক কীভাবে উৎপাদন করবে? গতবার আলু উৎপাদন কম হওয়ায় চালের ওপর চাপ পড়েছে। তাই আগামীতে উৎপাদন বাড়াতে কৃষিঋণের বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
কৃষিঋণ আদায় : দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বরাবরই সেরা পারফরম্যান্স আসে কৃষি খাত থেকে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের অনুপাতে আদায়ের হারের দিক থেকে কৃষির অবস্থান প্রতি বছরই শীর্ষে। এবারও এ খাতে ঋণ বিতরণ কমলেও ঋণ আদায় আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ আদায় হয়েছে ৯ হাজার ২০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাস শেষে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে কৃষিঋণের খেলাপির হার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের ২০ দশমিক ২০ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। গত ৭ মাসে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
নতুন ঋণ নীতিমালা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ : বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণকে আরও গতিশীল করতে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে। যেসব ব্যাংকের নিজস্ব শাখা পল্লী অঞ্চলে নেই, তাদের ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা বা এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এমআরএ) নিবন্ধিত এনজিও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হবে এবং তারা যেন অতিরিক্ত সুদ নিতে না পারে, সে জন্য সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র  বলেন, দেশে উৎপাদন বাড়াতে কৃষিঋণ বিতরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য প্রতিবছর কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করা হয় এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের শেষ দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় কৃষিঋণ বিতরণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে; বিশেষত জুলাই-আগস্টে ঋণ বিতরণ ও লেনদেন কমে যায়। তবে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ঋণ বিতরণে গতি ফিরেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতিবাচক অগ্রগতি থাকলেও আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়াতে হবে এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করা এবং কাঁচামাল ও উৎপাদন খরচ কমাতে সরকারের বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ জরুরি।

লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

প্যানেল/মো.

×