ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

চুপিসারে কিডনি নষ্ট করছে আপনার এই ১ অভ্যাস! আজই বাদ দিন!

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২১ জুলাই ২০২৫

চুপিসারে কিডনি নষ্ট করছে আপনার এই ১ অভ্যাস! আজই বাদ দিন!

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে, বর্জ্য পদার্থ দূর করে এবং শরীরের তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিডনির সুস্থতা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস অজান্তেই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি সাধারণ অভ্যাস রয়েছে যা প্রতিনিয়ত কিডনির ক্ষতি করে চলেছে। সেই অভ্যাসটি হলো – পর্যাপ্ত পানি পান না করা।

আমরা প্রায়শই ব্যস্ততার অজুহাতে বা অলসতার কারণে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করি না। এই সাধারণ অভ্যাসটি যে কীভাবে চুপিসারে কিডনির সর্বনাশ ঘটাচ্ছে, তা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না।

কেন পর্যাপ্ত পানি পান না করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর?

১. টক্সিন জমা হওয়া: কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং টক্সিন ছেঁকে বের করে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশন করা। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে কিডনি এই বর্জ্য পদার্থগুলো সঠিকভাবে ফিল্টার করতে পারে না। ফলে টক্সিনগুলো কিডনিতে জমা হতে শুরু করে, যা কিডনির কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

২. কিডনি পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি: কম পানি পান করলে মূত্র ঘন হয়ে যায় এবং তাতে খনিজ লবণ ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ জমাট বাঁধতে শুরু করে। এটি কিডনিতে পাথর (কিডনি স্টোন) তৈরির ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। এই পাথরগুলো কিডনির কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে এবং তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে।

৩. রক্ত প্রবাহে প্রভাব: যখন শরীর পর্যাপ্ত পানি পায় না, তখন রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এতে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদী রক্ত প্রবাহের এই ঘাটতি কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস করে।

৪. ডিহাইড্রেশন ও কিডনি ইনজুরি: চরম ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কিডনিতে তীব্র আঘাত হানতে পারে (Acute Kidney Injury)। এটি কিডনির কার্যকারিতাকে দ্রুত খারাপ করে দিতে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা না পেলে স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৫. ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা: শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে পানি অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এর কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে।

কিডনিকে সুস্থ রাখতে করণীয়:

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) পানি পান করা উচিত। তবে, শারীরিক পরিশ্রম, আবহাওয়া এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে এই পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

পানির বোতল সাথে রাখুন: কর্মক্ষেত্রে বা বাইরে যাওয়ার সময় সবসময় একটি পানির বোতল সাথে রাখুন, যা আপনাকে নিয়মিত পানি পান করতে মনে করিয়ে দেবে।

খাবারে পানির উৎস বাড়ান: তরমুজ, শসা, কমলা, লেবু, লাউয়ের মতো পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি বেশি করে খান।

সচেতন হোন: আপনার প্রস্রাবের রং পরীক্ষা করুন। যদি তা গাঢ় হলুদ হয়, তবে বুঝতে হবে আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করছেন না।

আমাদের এই সাধারণ অভ্যাসটি পরিবর্তন করে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ থেকে বাঁচাতে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। আপনার কিডনির সুস্থতা আপনার হাতেই।

ফারুক

×