
ছবি: সংগৃহীত
শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই নয়, বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যেও কিডনি রোগের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণ এই সমস্যার মূল কারণ। এনডিটিভি ও ইউএস রেনাল ডেটা সিস্টেমের (২০২৫) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, গত দুই দশকে শিশুদের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) এর হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
কেন এই উদ্বেগ?
শিশুদের মধ্যে জন্মগত কিডনি সমস্যা যেমন মাল্টিসিস্টিক ডিসপ্লাস্টিক কিডনি, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম (প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন নির্গমন) এবং বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণের মতো সমস্যাগুলো ক্রমশ বেশি দেখা যাচ্ছে। এসব সমস্যা প্রায়শই সাধারণ ভেবে উপেক্ষা করা হয়, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
শিশুদের কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী?
-
চোখ বা গোড়ালি ফোলা
-
প্রস্রাবে ফেনা দেখা যাওয়া
-
বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণ
-
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
-
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
কী কী কারণে শিশুরা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে?
-
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
-
অপর্যাপ্ত পানি পান: বিশেষ করে গরমে শিশুরা পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
-
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: পর্যাপ্ত খেলাধুলা বা শারীরিক কার্যকলাপের অভাব স্থূলতা (ওবেসিটি) এবং মেটাবলিক সিন্ড্রোমের ঝুঁকি বাড়ায়, যা পরোক্ষভাবে কিডনির ক্ষতি করে।
-
দূষণ: বায়ু, মাটি ও পানির দূষণ শিশুদের কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
-
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক বা অন্য কোনো ওষুধ কিডনির স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শিশুদের কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়:
বিশেষজ্ঞরা শিশুদের কিডনি সুস্থ রাখতে কিছু সহজ অভ্যাস পালনের পরামর্শ দিয়েছেন:
-
পুষ্টিকর খাবার: তাজা ফল, শাকসবজি এবং ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের খাদ্যতালিকায় রাখুন। জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
-
পর্যাপ্ত পানি পান: বিশেষত গরমে এবং খেলাধুলা বা ব্যায়ামের পর শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করান।
-
শারীরিক কার্যকলাপ: শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা খেলাধুলা বা হাঁটার সুযোগ দিন।
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ৩ বছর বয়স থেকে প্রতি বছর একবার শিশুর রক্তচাপ ও প্রস্রাব পরীক্ষা করানো উচিত।
-
ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের ওষুধ দেবেন না।
বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
মণিপাল হাসপাতাল, দিল্লির ডা. সুমন লতা বলেছেন, "শিশুর প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন (যেমন বারবার টয়লেট যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া) দেখলে অবহেলা করবেন না। সময়মতো নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নিন।"
মণিপাল হাসপাতাল, জয়পুরের ডা. শ্যাম সুন্দর নোওয়াল বলেছেন, "জন্মগত কিডনি সমস্যা থাকলে নিয়মিত মনিটরিং জরুরি। জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তনই শিশুদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।"
মনে রাখবেন, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে ৯০% ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সাব্বির