
ছবি: প্রতীকী
হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ আজকাল আমাদের সমাজে খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক পরিবারেই দেখা যায় বাবা, মা, দাদা, দাদি কিংবা অন্য কোনো আত্মীয় হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন বা আছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি পরিবারের কারও এমন রোগ থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি নিজেকে নিয়ে সচেতন হয়েছেন? আপনি কি জানেন, এমন পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আপনার ঝুঁকিও অনেক বেশি? অনেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দেন না, অথচ সচেতন হওয়াটাই হতে পারে আপনার সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ।
পরিবারের কারও হার্টের সমস্যা থাকলে সেটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে “ফ্যামিলিয়াল হিস্টরি” বা “পারিবারিক ইতিহাস” বলা হয়। এটি হৃদরোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর। অর্থাৎ, যদি আপনার বাবা-মা, ভাইবোন, দাদা-দাদি বা নানা-নানির মধ্যে কারও হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের ব্লকেজ বা স্ট্রোক হয়ে থাকে, তবে আপনারও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা গড়ে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ কিছু জিনগত (জেনেটিক) বৈশিষ্ট্য বাবা-মা থেকে সন্তানের শরীরে চলে আসে, যেগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তবে শুধুই জিন দায়ী নয়। পরিবারে এক ধরনের জীবনধারা বা খাদ্যাভ্যাসও থাকতে পারে যা একাধিক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং হার্টের রোগে ভূমিকা রাখছে। যেমন—অতিরিক্ত তেল-মসলা খাওয়া, ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এগুলো যদি পরিবারে স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে গড়ে ওঠে, তাহলে সেটা সন্তানদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জিনগত এবং পরিবেশগত—দুই দিক থেকেই ঝুঁকি তৈরি হয়।
এই অবস্থায় করণীয় হলো, নিজের শারীরিক অবস্থার প্রতি সচেতন থাকা এবং নিয়মিত চেকআপ করা। যারা জানেন যে তাদের পরিবারে হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের উচিত অন্তত ২৫ বা ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, ইসিজি ইত্যাদি টেস্ট করানো। কারণ অনেক সময় হার্টের সমস্যার কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না, অথচ শরীরের ভেতরে তা ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে।
আপনার জীবনযাপন যদি সুস্থ না হয়, তাহলে পারিবারিক ঝুঁকির সঙ্গে সেটি মিলেমিশে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি পরিহার করতে হবে। বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ওটস এবং লো ফ্যাট প্রোটিন খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। যারা ধূমপান করেন, তাদের অবশ্যই এখনই বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোও হার্টের জন্য উপকারী। যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাদের উচিত প্রতিঘণ্টায় অন্তত ৫ মিনিট হেঁটে আসা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক চাপ। অনেক সময় কাজের চাপ, পারিবারিক ঝামেলা, অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা বা ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ তৈরি হয়। এই চাপ হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই নিজেকে সময় দিন, প্রিয় কাজ করুন, প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নিন।
পরিবারে কারও হার্টের সমস্যা থাকলে একে অবহেলা না করে বরং সচেতন জীবনযাপনই হতে পারে আপনার প্রতিরোধের হাতিয়ার। মনে রাখবেন, হৃদরোগ শুধু প্রবীণদের রোগ নয়। তরুণরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেক সময় অল্প বয়সেই মারা যাচ্ছেন। তাই আগেই প্রস্তুত থাকুন। সুস্থ জীবনযাপনকে অভ্যাসে পরিণত করুন। আপনি যতটা সাবধান হবেন, আপনার হার্টও ততটা ভালো থাকবে।
পারিবারিক ইতিহাস কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়, তবে এটি একটি সতর্কবার্তা। আপনি সেই বার্তাটি শুনলেন কি না, সেটিই ঠিক করে দেবে আপনার আগামী দিনের স্বাস্থ্য।
এম.কে.