
ছবি: সংগৃহীত
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনিদ্রা একটি গুরুতর সমস্যা, যা তাদের সামগ্রিক জীবন-সন্তুষ্টি কমিয়ে দিচ্ছে। ১৬ জুলাই ২০২৫-এ প্রকাশিত এই গবেষণা প্রায় ১০,০০০ প্রাপ্তবয়স্কের ডেটা বিশ্লেষণ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফল:
গবেষণায় দেখা গেছে, ADHD বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনিদ্রার হার ২৫% এরও বেশি। এর ফলে তাদের ঘুমের মান খারাপ হয়, ডিপ্রেশন ও মুড সুইংয়ের মতো মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায়।
ADHD ও অনিদ্রার পারস্পরিক প্রভাব:
এই দুটি সমস্যা একে অপরের সাথে একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে:
-
ADHD → অনিদ্রা: ADHD-এর মূল বৈশিষ্ট্য যেমন ইম্পালসিভিটি (আবেগপ্রবণতা) ও হাইপারঅ্যাকটিভিটি (অতিরিক্ত সক্রিয়তা) ঘুম আসতে বাধা দেয়। মস্তিষ্কের অতিরিক্ত সক্রিয়তা ঘুমের আগে শান্ত হওয়া কঠিন করে তোলে। এছাড়াও, ADHD আক্রান্তদের সার্কাডিয়ান রিদম (প্রাকৃতিক ঘুম-জাগরণ চক্র) প্রায়শই বিঘ্নিত হয়, যা ঘুমের সময়কে অনিয়মিত করে তোলে।
-
অনিদ্রা → ADHD লক্ষণগুলো আরও খারাপ: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মনোযোগ ধরে রাখা ও ইমোশন রেগুলেশন (আবেগ নিয়ন্ত্রণ) ক্ষমতা কমে যায়। এটি ADHD-এর লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করে তোলে, ফলে মনোযোগের ঘাটতি বাড়ে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।
সমাধানের উপায়:
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. সারাহ চেলাপ্পা বলেছেন, "ADHD ও অনিদ্রার মধ্যে সম্পর্ক জটিল, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা জীবনমান উন্নত করতে পারে।" এই দুষ্টচক্র ভাঙতে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো সহায়ক হতে পারে:
-
কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT-I): অনিদ্রা কমানোর জন্য এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী থেরাপি। এই থেরাপি ঘুমের সাথে সম্পর্কিত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
-
স্লিপ রেস্ট্রিকশন থেরাপি: ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘুমের গুণমান উন্নত করা যায়। এতে নির্দিষ্ট সময় ধরে বিছানায় থাকার অভ্যাস তৈরি হয়, যা ঘুমকে গভীর করে।
-
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
-
রাতে স্ক্রিন টাইম কমানো (বিশেষ করে ঘুমানোর এক-দুই ঘণ্টা আগে ফোন, ল্যাপটপ বা টিভি দেখা বন্ধ করা)।
-
নিয়মিত ব্যায়াম করা (তবে ঘুমানোর ঠিক আগে নয়)।
-
একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করা এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগা।
-
BMJ Mental Health এবং Netherlands Sleep Registry-এর গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ADHD আক্রান্ত বা ADHD বৈশিষ্ট্যযুক্ত ব্যক্তিদের ঘুমের সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অনিদ্রার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তারা ভালো ঘুম, উন্নত মানসিক অবস্থা এবং সামগ্রিকভাবে আরও উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন।
আপনার জন্য কিছু সহজ টিপস:
-
রাত ১০টার পর ফোন/ল্যাপটপ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
-
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও জাগুন, এমনকি ছুটির দিনেও।
-
সন্ধ্যা ৬টার পর ক্যাফেইন (কফি, চা) পান করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাব্বির