ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মীরসরাইয়ের ঝর্ণায় পাঁচ বছরে ১৪ প্রাণহানি, নিরাপত্তায় তদারকির অভাব

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২১ জুলাই ২০২৫

মীরসরাইয়ের ঝর্ণায় পাঁচ বছরে ১৪ প্রাণহানি, নিরাপত্তায় তদারকির অভাব

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনাগুলো পর্যটকদের কাছে স্বর্গ হলেও, বাস্তবে অনেকের জন্য তা হয়ে উঠছে মৃত্যুফাঁদ। গত পাঁচ বছরে এসব ঝরনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন পর্যটক। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক।

স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, পর্যটকদের বেপরোয়া আচরণ, সাঁতার না জানা, সতর্কতা না মানা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গাইড ছাড়া প্রবেশই এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ। মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া, রূপসি, নাপিত্তাছড়া, সোনাইছড়ি, মহামায়া এবং সর্বশেষ আলোচিত মেলখুম ট্রেইল-এসব ঝরনাগুলোর অনেকটাই দুর্গম ও পিচ্ছিল। বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বিপদ আরও বাড়ে। গত ৯ জুলাই মেলখুম ট্রেইলে পড়ে মৃত্যু হয় দুই তরুণ শিক্ষার্থী গালিব ও হৃদয়ের (দুজনের বয়স ২২)। তাঁরা ফেনী থেকে এসেছিলেন ঝর্ণা দেখতে। আহত হন আরও তিনজন।

এমন মৃত্যুর ঘটনা এখানেই থেমে নেই। মীরসরাই ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে অন্তত শতাধিক পর্যটক পাহাড়ে পথ হারিয়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দল উদ্ধার করে তাদের।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় থাকা বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত এসব ঝরনাগুলো প্রতিবছর ইজারা দিয়ে থাকে বন বিভাগ। কিন্তু ইজারা মূল্য বাড়লেও বাড়েনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ঝরনাগুলো ইজারা দেওয়া হয় ১২ লাখ টাকায়, ২০২৩ সালে ২৯ লাখ, ২০২৪ সালে ৩০ লাখ টাকা এবং ২০২৫ সালে ৩৯ লাখ টাকায়। এবছর ইজারা নিয়েছে এ.আর. এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এ.আর. এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম হারুন বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের সতর্ক করে টিকিট দিই। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে সতর্কতা বোর্ড দিয়েছি। গাইড নিতে বলা হলেও অধিকাংশই নেয় না।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত গাইড বা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। পর্যটকেরা ইচ্ছেমতো দুর্গম ঝরনায় গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সমতলের লোকজন পাহাড়ের আচরণ বোঝে না। পানির নিচে কূপ বা গর্ত থাকলেও তা বোঝার উপায় নেই। তাড়াহুড়ো ও চ্যালেঞ্জিং মানসিকতায় অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে।’

মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের স্টেশন অফিসার সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বেশির ভাগ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তরুণ শিক্ষার্থী বা টিনএজার। অনেকেই সাঁতার জানেন না।’

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘এটি দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘ঝরনাগুলো দুর্গম এবং প্রাকৃতিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ। তবু আমরা ইজারাদার ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছি।’

মিরাজ খান

×