ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ফোন চুরি হলেও ব্যাংক অ্যাপ, ফেসবুক, ছবি—কোনোটাই পাবে না হ্যাকার! জানুন পদ্ধতি

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪৫, ২১ জুলাই ২০২৫

ফোন চুরি হলেও ব্যাংক অ্যাপ, ফেসবুক, ছবি—কোনোটাই পাবে না হ্যাকার! জানুন পদ্ধতি

ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল চুরির হার ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে—আপনার ডিভাইস ও ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে এখনই নিতে হবে কিছু জরুরি পদক্ষেপ।

যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন গড়ে ২০০টিরও বেশি মোবাইল ফোন চুরি হচ্ছে। ফোন হারানোর ক্ষতির চেয়েও ভয়াবহ বিপদ হচ্ছে তথ্য চুরি। চোরেরা ভিকটিমদের ব্যাংকিং অ্যাপ, ব্যক্তিগত মেসেজ ও পরিচয় পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে—যার ফলে হাজার হাজার পাউন্ডের ক্ষতি হচ্ছে অনেকের।

শুধু লন্ডনেই গত বছরে মোবাইল চুরির হার বেড়েছে প্রায় ৪০%। এই পরিস্থিতিতে নিজের ফোন ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

এখানে আপনার ফোন এবং তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ, প্রফেশনাল গাইড দেওয়া হলো:

সবার আগে যা যা করবেন

১. ‘Find My Phone’ বা সমতুল্য ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু করুন
অ্যাপলের Find My, স্যামসাংয়ের SmartThings Find, কিংবা গুগলের Find My Device অ্যাপ আগে থেকেই সেট করে রাখুন। এসব অ্যাপের মাধ্যমে আপনি:

  • ফোনের অবস্থান জানতে পারবেন

  • ফোন রিমোটলি লক করতে পারবেন

  • সমস্ত তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন

  • ফেরত দেওয়ার জন্য কন্টাক্ট ইনফো প্রদর্শন করতে পারবেন

২. ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করুন ফোন আনলক করতে
এটি ফোনের নিরাপত্তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া "শোল্ডার সার্ফিং" ঠেকায়—যেখানে চোরেরা আপনাকে পিন টাইপ করতে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন ছিনিয়ে নেয়।

৩. ব্যাংকিং ও ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপে বায়োমেট্রিক লগইন চালু রাখুন
ফোন চুরি হলেও চোর যেন অ্যাপে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ফেস আইডি বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট লগইন ব্যবহার করুন। যদি পিন ব্যবহার করেন, তবে তা যেন ফোনের আনলক পিনের সঙ্গে না মেলে।

৪. আপনার ফোনের IMEI নাম্বার জেনে রাখুন
*#06# ডায়াল করলে আপনার ফোনের ১৫-সংখ্যার ইউনিক IMEI নম্বর দেখা যাবে। এটি স্ক্রিনশট নিয়ে সেভ করে রাখুন। ফোন চুরি হলে পুলিশ ও মোবাইল অপারেটর এই নম্বর দিয়েই ফোন ব্লক করতে পারবে।

৫. লক স্ক্রিনে মেসেজ প্রিভিউ বন্ধ করে দিন
ব্যাংকের ওটিপি বা অন্যান্য গোপন কোড যাতে লক স্ক্রিনে দেখা না যায়, সেজন্য নোটিফিকেশন সেটিংসে গিয়ে মেসেজ প্রিভিউ বন্ধ করুন।

৬. নিয়মিত ফোন ব্যাকআপ নিন
ছবি, ভিডিও, কন্টাক্ট ইত্যাদি যেন হারিয়ে না যায়, তাই ক্লাউড বা কম্পিউটারে নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন।

৭. ফোন ইন্স্যুরেন্সে ভরসা করবেন না আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে
বেশিরভাগ ফোন ইন্স্যুরেন্স কেবল হ্যান্ডসেট কভার করে, কিন্তু চুরি হয়ে যাওয়া টাকার জন্য কভার দেয় না। আপনার পলিসি ভালোভাবে পড়ে নিন এবং বিকল্প ইন্স্যুরেন্স ভাবুন (যেমন ব্যাংকের প্যাকেজে দেওয়া কভারেজ)।

৮. জনসমক্ষে ফোন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
বিশেষ করে ভিড়ভাট্টা জায়গায় (যেমন রেলস্টেশন, ফুটপাত) ফোন হাতে রাখবেন না। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। চাইলে স্ট্র্যাপ বা ল্যানিয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

৯. ফোনের নোটস অ্যাপে কখনও পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না
তার বদলে এনক্রিপশন ও বায়োমেট্রিক সুবিধাসহ একটি নিরাপদ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন।

১০. ব্যাংকিং অ্যাপ লুকিয়ে রাখুন সিকিউর ফোল্ডারে
আপনার ফোনে সিকিউর ফোল্ডার বা প্রাইভেট মোড ব্যবহার করে ব্যাংকিং অ্যাপগুলো রাখুন, যাতে আলাদা বায়োমেট্রিক চেক ছাড়া কেউ খুলতে না পারে।

১১. লক থাকা অবস্থায় কন্ট্রোল সেন্টার বন্ধ রাখুন (iPhone)
এতে চোরেরা ফোনের প্লেন মোড অন বা লোকেশন ট্র্যাকিং বন্ধ করতে পারবে না।

১২. আলাদা স্ক্রিন টাইম পাসকোড সেট করুন (iPhone)
ফোনের মূল সেটিংসে ঢুকে ফেস আইডি, অ্যাপল আইডি কিংবা ‘Find My iPhone’ অফ করতে যেন না পারে, সেজন্য একটি আলাদা পিন ব্যবহার করুন।

১৩. অ্যান্ড্রয়েডে ‘Multiple Users’ অপশন ব্যবহার করুন
ভিন্ন ইউজার প্রোফাইল তৈরি করে সেখানে ব্যাংকিং অ্যাপ না রাখলে চুরি হয়ে গেলেও সে প্রোফাইলে ঢুকতে পারবে না।

১৪. আইফোনে ‘Stolen Device Protection’ চালু রাখুন (iOS 17.3+)
আপনার ফোন অচেনা জায়গায় থাকলে এটি বায়োমেট্রিক যাচাই ছাড়া Apple Wallet চালু হতে দেবে না এবং গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস পরিবর্তনে সময় নিবে।

১৫. স্যামসাং বা অ্যান্ড্রয়েডের চুরি প্রতিরোধ ফিচার চালু করুন
স্যামসাং ফোনে রয়েছে:

  • Theft Detection Lock: হঠাৎ মোবাইল কেঁচে নেওয়ার মতো আচরণ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে ফোন লক হয়ে যাবে।

  • Offline Device Lock: ফোন অফলাইন বা প্লেন মোডে গেলে নিজে থেকেই লক হয়ে যাবে।

১৬. ব্যাংকিং অ্যাপ আলাদা ডিভাইসে ব্যবহার করুন
সম্ভব হলে একটি আলাদা ফোন বা ট্যাবলেটে আপনার ব্যাংক অ্যাপ রাখুন, যা বাইরে নিয়ে যান না। এতে চুরি হলেও আপনার অর্থ নিরাপদ থাকবে।

ফোন চুরি হলে কী করবেন

১ম ধাপ: ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করুন
Find My, SmartThings বা Find My Device দিয়ে ফোন লক করুন, লোকেশন দেখুন অথবা দরকার হলে সমস্ত তথ্য মুছে ফেলুন।

২য় ধাপ: পুলিশে রিপোর্ট দিন
IMEI নম্বরসহ পুলিশে চুরি রিপোর্ট করুন। এতে একটি অপরাধ রেফারেন্স নম্বর পাবেন যা বীমার জন্য দরকার হবে।

৩য় ধাপ: দ্রুত ব্যাংকে যোগাযোগ করুন
আপনার অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন রোধে ব্যাংকে জানিয়ে দিন। প্রয়োজনে আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট মনিটর করুন।

৪র্থ ধাপ: সমস্ত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
সবার আগে অ্যাপল, গুগল ও ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলান। তারপর ধাপে ধাপে অন্য অ্যাপ ও সার্ভিসের পাসওয়ার্ড বদলান।

৫ম ধাপ: ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে জানান
পুলিশ রিপোর্ট ও অপরাধ রেফারেন্স নম্বর দিয়ে দাবি দাখিল করুন।

৬ষ্ঠ ধাপ: স্ক্যামের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন
চুরির পরে চোরেরা আপনার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ব্যাংক বা বিভিন্ন সংস্থার নামে ফেক কল বা ইমেইল করতে পারে। কখনও ব্যক্তিগত তথ্য ফোনে বা ইমেইলে দেবেন না।

আবির

×