
ছবিঃ সংগৃহীত
কিডনি ক্যানসার সব সময় জোরালো কোনো লক্ষণ নিয়ে হাজির হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই এটি শরীরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, অথচ শরীর থেকে নিরীহ কিছু সংকেত বের হতে থাকে—যা আমরা ক্লান্তি বা চাপের মতো সাধারণ কারণ ভেবে এড়িয়ে যাই।
তবে এই নিরীহ দেখাতে লাগা লক্ষণগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়াবহ কিডনি ক্যানসারের প্রাথমিক চিহ্ন। এসব লক্ষণ আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য নয়, বরং সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জানা জরুরি।
চলুন জেনে নিই কিডনি ক্যানসারের এমন ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ যা দেখতে নিরীহ মনে হলেও, এর গুরুত্ব কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই:
১. প্রস্রাবে রক্ত—অনেক সময় চোখে ধরা পড়ে না
প্রস্রাবে রক্ত দেখলে অনেকেই ধরে নেন ইউরিনারি ইনফেকশন বা কিডনি স্টোন হয়েছে। কিন্তু কিডনি ক্যানসারে মাইক্রোস্কোপিক হেমাচুরিয়া অর্থাৎ খুব সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা চোখে ধরা পড়ে না।
এটি সাধারণত রুটিন ইউরিন টেস্টে ধরা পড়ে। আবার অনেক সময় একদিন রক্ত আসে, পরদিন আর কিছুই দেখা যায় না—ফলে বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। অথচ এটি আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, কিডনি ক্যানসারের অন্যতম উপেক্ষিত প্রাথমিক লক্ষণ।
২. পাশে বা পিঠে একধরনের ব্যথা যা সহজে যায় না
দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে থাকা বা ভুলভাবে ঘুমানোয় পিঠে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তবে কিডনি ক্যানসারে যে ব্যথা হয়, তা সাধারণ পেশির ব্যথার মতো নয়।
এটি ফ্ল্যাঙ্ক পেইন নামে পরিচিত—পাঁজরের নিচে পিঠের পাশে এক ধরনের ব্যথা, যা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বিশ্রাম নিলেও কমে না। শুরুতেই এটি মারাত্মক না হলেও, প্রাথমিক টিউমার আশেপাশের টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে এমন ব্যথার জন্ম দিতে পারে।
৩. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া—কোনো কারণ ছাড়াই
ডায়েট না করেই ওজন কমে গেলে অনেকেই খুশি হন। কিন্তু যখন এর সঙ্গে ক্ষুধা কমে যাওয়া দেখা দেয়, তখন সতর্ক হওয়া উচিত।
কিডনি ক্যানসারে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে। ক্যানসার সৃষ্ট ইনফ্লেমেশন ও হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে চর্বি ও মাসল দ্রুত কমে যেতে থাকে। ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বলছে, হঠাৎ ওজন হ্রাস অনেক ধরনের ক্যানসারের মতো রেনাল সেল কারসিনোমা-রও বড় লক্ষণ।
৪. বারবার জ্বর—কোনো সংক্রমণ ছাড়াই
মৃদু জ্বর আমরা সাধারণত ঠান্ডা, ভাইরাল ফ্লু বা স্ট্রেসের কারণে ধরে নিই। কিন্তু কিডনি ক্যানসার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে উত্তেজিত করে, যার ফলে নিয়মিত নিম্ন-গ্রেড জ্বর দেখা দেয়।
এ ধরনের জ্বর সাধারণত কাশি, সর্দি বা সংক্রমণের উপসর্গ ছাড়া হয়—শুধু শরীরে হালকা গরমভাব, ক্লান্তি ও অস্বস্তি থাকে।
৫. ক্লান্তি—যেটা বিশ্রামেও কমে না
অনেক সময় আমরা ব্যস্ততা, কম ঘুম বা মানসিক চাপের কারণে ক্লান্তি অনুভব করি। কিন্তু কিডনি ক্যানসারে যে ক্লান্তি দেখা যায় তা গভীর, হাড়ের ভেতর পর্যন্ত টান দেয় এমন একধরনের অবসাদ।
এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো অ্যানিমিয়া। কিডনি থেকে এরিথ্রোপোইটিন নামের একটি হরমোন তৈরি হয় যা রক্তে লোহিত কণিকার উৎপাদনে সহায়তা করে। ক্যানসার এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, ফলে শরীরজুড়ে অক্সিজেন কম পৌঁছায় এবং ক্লান্তি বেড়ে যায়।
৬. পেট বা পাশের দিকে ফোলা বা চাকা অনুভব হওয়া
পেট ফোলা বললেই আমরা গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস ভাবি। কিন্তু কিডনি ক্যানসারে এক ধরনের কঠিন, নড়াচড়া না করা চাকা অনুভূত হয়—বিশেষ করে পাশ বা পিঠের নিচের দিকে।
শুরুতে এতে ব্যথা না থাকলেও সময়ের সঙ্গে এটি বড় হয়ে ওঠে। অনেক সময় মনে হয় ওজন বেড়েছে, অথচ এটা হতে পারে টিউমারের ফল।
৭. রাতে ঘুমের সময় ঘেমে ওঠা—চাদর-বিছানা ভিজে যাওয়ার মতো
রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়াকে সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তন বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু কিডনি ক্যানসারে দেহের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হলে এমন তীব্র ঘাম হতে পারে।
এই ঘাম এতটাই বেশি হয় যে অনেক সময় পোশাক বা বিছানা পরিবর্তন করতে হয়। শরীর তখন এমনভাবে সাড়া দেয়, যেন ভেতরের কোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে চেষ্টা করছে।
সতর্ক হোন, ভয় নয়
এই উপসর্গগুলো একা একা মানেই কিডনি ক্যানসার নয়। তবে যদি একাধিক লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দেয় এবং তা বারবার ঘটতে থাকে, তাহলে অবহেলা না করে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে কিডনি ক্যানসারের চিকিৎসা সফলতার হার অনেক বেশি। তাই নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন।
ইমরান