ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

এই অভ্যাসগুলো বদলালেই রেহাই মিলবে ভোররাতের ঘুমভাঙা দুঃস্বপ্ন থেকে!

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ২১ জুলাই ২০২৫

এই অভ্যাসগুলো বদলালেই রেহাই মিলবে ভোররাতের ঘুমভাঙা দুঃস্বপ্ন থেকে!

ছবি: সংগৃহীত

রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং তারপর আর ঘুমাতে না পারা অনেকেরই পরিচিত অভিজ্ঞতা। অনেকে একে সাধারণ ঘুমের সমস্যা বলে ভাবেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দে (circadian rhythm) ব্যাঘাত।

আধুনিক বিজ্ঞান যেমন ব্যাখ্যা দেয় এর কারণ, তেমনি প্রাচীন লোকবিশ্বাসও বলে এই সময়টা আমাদের শরীর-মন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে। চলুন জেনে নিই এর পেছনের রহস্য।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান লোককাহিনীতে রাত ৩টা থেকে ৫টা সময়কে বলা হয় Hour of the Wolf বা “ঘুমন্ত নেকড়ের সময়।” সুইডিশ পরিচালক ইংমার বার্গম্যান তাঁর ১৯৬৮ সালের বিখ্যাত সিনেমায় বলেন—এটি সেই সময় যখন মানুষের মৃত্যুহার বেশি, ঘুম গভীর হয়, এবং দুঃস্বপ্ন সবচেয়ে বাস্তব মনে হয়।

এই সময়কে পশ্চিমা সমাজেও “ডাইনি সময়” বা “অশুভ ঘন্টা” বলা হয়, যাকে অতিপ্রাকৃত শক্তির সক্রিয়তার সময় মনে করা হয়।

অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসে বিশ্বাস না করলেও, বাস্তবতা হলো—এই সময় ঘুম ভাঙলে অনেকেই দুঃখ, ভয়, অনিশ্চয়তা কিংবা অজানা উদ্বেগ অনুভব করেন। মনে হয় চারপাশ শুনশান, আর মন চুপচাপ ভাবে কিছু একটা ভুল হচ্ছে।

আপনার শরীরের একটি প্রাকৃতিক ছন্দ আছে, যেটি ২৪ ঘণ্টা ধরে ঘুম, হরমোন, শরীরের তাপমাত্রা ও শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। এই ছন্দকে বলে circadian rhythm

রাত ৩টা থেকে ৫টা সময় এই ছন্দ সবচেয়ে নিচে থাকে—

  • শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়

  • রক্তচাপ সবচেয়ে নিচে নেমে আসে

  • বিপাকক্রিয়া (metabolism) ধীর হয়

এই সময় হওয়া উচিত সবচেয়ে গভীর ও বিশ্রামদায়ক ঘুমের সময়। কিন্তু আপনি যদি মানসিক চাপ বা উদ্বেগে থাকেন, তবে শরীর সহজেই এই সময় জেগে যেতে পারে। ছোট্ট কোনো শব্দ, দুশ্চিন্তা বা রক্তে চিনির ওঠানামা পর্যন্ত এই ঘুম নষ্ট করে দিতে পারে।

মন যদি আগে থেকেই উদ্বিগ্ন থাকে, তখন শরীর “স্ট্রেস রেসপন্স” তৈরি করে—হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, মন চঞ্চল হয়, আর চোখ খোলা রাখতেই হয়।

আজকের দুনিয়ায় আমরা ঘুমাতে যাই মাথাভর্তি চিন্তা নিয়ে—
অফিসের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট, ফেলে রাখা কাজ, পারিবারিক টেনশন—সবকিছু মাথায় নিয়ে আমরা বিছানায় যাই।

ঘুমানোর সময় এসব চিন্তা সাময়িকভাবে চুপ থাকলেও, ভোররাতে যখন শরীর দুর্বল, তখনই সেগুলো মনের গভীর থেকে উঠে আসে। তখন আপনি—

  • আগের দিনের কথাবার্তা মনে করেন

  • ভবিষ্যতের চিন্তায় ভেঙে পড়েন

  • নিজেকে নিয়ন্ত্রণহীন মনে করেন

অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, এই সময় ঘুম ভাঙা হচ্ছে মনের একটি বিপদ-সঙ্কেত—যেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে আপনি মানসিকভাবে চাপে আছেন, হয়তো নিজের অজান্তেই।

এই সমস্যা নিয়মিত হলে কিছু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন—

রাতে ডায়েরি লিখুন
মন পরিষ্কার রাখতে ঘুমানোর আগে ৫-১০ মিনিট লিখুন—কী ভাবছেন, কী করতে হবে, কোন চিন্তা ঝাঁকি দিচ্ছে।

মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস
দেহ ও মন শান্ত রাখতে ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাস বা পেশি শিথিল করার চর্চা করুন।

স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন
ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ বন্ধ রাখুন। নীল আলো ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়।

ক্যাফেইন ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
রাতে চা, কফি, অ্যালকোহল বা মশলাদার খাবার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

নিয়মিত ঘুমের সময় মেনে চলুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠলে শরীরের ঘড়ি ঠিক থাকে।

যদি একটানা কয়েক সপ্তাহ ধরে এই সময় ঘুম ভাঙে, আর আপনার মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে—তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এর পেছনে থাকতে পারে—

  • উদ্বেগ বা ডিপ্রেশন

  • হরমোন পরিবর্তন (বিশেষ করে ৩০-৫০ বয়সে)

  • ইনসমনিয়া বা ঘুমের রোগ

  • অতীতের ট্রমা বা মানসিক আঘাত

একটি ঘুমের ডায়েরি রাখুন—কখন ঘুমান, কবে ঘুম ভাঙে, কী ভাবছিলেন, সেদিন কী খেয়েছেন—এসব লিখলে চিকিৎসকও সমস্যা সহজে বুঝতে পারবেন।

আবির

×