ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

নিশ্চিত গন্তব্যের অনিশ্চিত যাত্রা

তৌহিদ-উল বারী

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২২ জুলাই ২০২৫

নিশ্চিত গন্তব্যের অনিশ্চিত যাত্রা

ছবি: সংগৃহীত

বায়ুর উপর ভর করে উড়তে সক্ষম হওয়া এক যন্ত্রের নাম "বিমান"। বৈমানিক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এই যন্ত্রকে ঘিরেই মানুষের যাতায়াত অনেকটা সহজ হয়েছে। তবে বৈমানিক ছাড়াও অনেক উড়োজাহাজ আছে, যা রিমোট কন্ট্রোলিং বা বিমানে থাকা কম্পিউটারের স্বনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।

দেশের অভ্যন্তরে বা আন্তর্জাতিকভাবে মানুষকে দ্রুত স্থানান্তরের জন্য বিমান সবচেয়ে কার্যকর হলেও পণ্য পরিবহন, সামরিক ব্যবহার, উদ্ধার ও জরুরি সেবা, চিত্রধারণ ও মানচিত্র তৈরি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কাজেও এ বিমান আমরা ব্যবহার করতে দেখি। পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও শুটিংয়ের কাজেও বিমানের যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিংয়ে যার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

যথেষ্ট অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর মানসিক দৃঢ়তা সম্পন্ন একজন PPL ও CPL লাইসেন্সপ্রাপ্ত পাইলট দিয়েই এই বিমান চালনা করা হয়। একটা বিমানে একজন পাইলট থাকলে, অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিমানগুলোতে দুইজন বা তার অধিক পাইলট দেখা যায়। তাদের পাশাপাশি কো-পাইলট ও ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারও থাকে, যারা ক্যাপ্টেন বা প্রধান পাইলটের নির্দেশে বিমান চালনা ও বিমানের যান্ত্রিক সমস্যা তদারকি করে থাকেন। বিমান চলাচলের ধারাবাহিক ধাপগুলো যেমন—ট্যাক্সি, টেক-অফ, ক্লাইম্ব, ক্রুজ, ডিসেন্ট, ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে একটি বিমান তার নির্ধারিত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। মূলত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC)-এর মাধ্যমে বিমানের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। প্রতিটি বিমান রেডিওর মাধ্যমে ATC-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তারা নির্দেশ দেয় কোন বিমান কবে, কোন পথে, কত উচ্চতায় চলবে।

এসব তদারকি আর নির্দেশনার মধ্য দিয়ে বিমান মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক চলাচল সাধন সম্ভব হয়। ফলে মানুষের সময় সাশ্রয় থেকে শুরু করে নিরাপদ ও আরামদায়কভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হয় যাত্রীদের। এছাড়া এক দেশ থেকে আরেক দেশে বাণিজ্যিক পণ্য আনা-নেওয়ার কাজও সম্ভবপর হয় এ বিমানের মাধ্যমে। কিন্তু সবকিছুর ভিড়ে তবুও যেন থেকে যায় ভয়, সংশয় আর উৎকণ্ঠা। এত নিরাপত্তা, সিস্টেম, পলিসি আর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখার পরও আমরা দেখি, প্রায়শই বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। শুধু দুর্ঘটনা ঘটে তা নয়, পরিলক্ষিত হয়—দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানটির সব যাত্রীও নিহত হন, এমন ঘটনাও অহরহ। সাম্প্রতিক এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা পুরো বিশ্বে এ আতঙ্ককে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

মূলত, যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল, খারাপ আবহাওয়া, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ভুল, রানওয়ে বা টেক-অফের সমস্যা, সন্ত্রাসী নাশকতা/হামলা, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা থেকে শুরু করে পাইলটের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ফলেই এসব বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফলে মারাত্মক হতাহত আর প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যার প্রেক্ষিতে যাত্রীদের মনে নানা উৎকণ্ঠা, ভয় আর হতাশা ও যথাযথ গন্তব্যে পৌঁছার অনিশ্চয়তা কাজ করে।

আমাদের এ অনিশ্চয়তা আর হতাশা কাটিয়ে উঠার জন্য বেশকিছু বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এসব দুর্ঘটনা রোধ প্রধানত প্রযুক্তিগত, মানবসম্পদ এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে কার্যকর হয়। পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে আমাদের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন—বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পাইলট ও ক্রুদের প্রশিক্ষণ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC) ব্যবস্থার উন্নয়ন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার, নিরাপত্তা নীতিমালা ও নিয়মকানুন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, ব্ল্যাকবক্স ও ফ্লাইট ডেটা বিশ্লেষণ, যান্ত্রিক ত্রুটি চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি। আশা করা যায়, এসবের যথাযথ, সুষ্ঠু তদারকি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিমান দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভবপর হবে।

লেখক

তৌহিদ-উল বারী
তরুণ লেখক ও কলামিস্ট

মুমু ২

×