
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা দেখছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে হঠাৎ করেই পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলছেন। কিন্তু বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের অর্থ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতবাদ, ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থার পথ সুগম করে দেবে। এতে করে বিভ্রান্তিমূলক সমাজ সৃষ্টি ও সরকার অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে উঠবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ১৬ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে পেশাজীবী সমাবেশ এবং শহীদ-নির্যাতিত পরিবারকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কারণে অনুষ্ঠানটি দ্রæত শেষ করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণের ঐক্য চাইলে কোনোভাবেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিৎ নয়। এই ধরনের দাবিকে কোনো দল গণতান্ত্রিক অধিকার বিবেচনা করলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ উপযোগী নয় বলেই আমরা মনে করি। কারণ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেই কিন্তু সেটি প্রমাণিত হয়েছে। দেশকে তাবেদার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো জনগণের ঐক্য।
তারেক রহমান বলেন, সংবিধিবদ্ধ বিধিবিধান আর আইনকানুন দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে আটকানো যায় না। আইন না মানার কারণেই কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য জনগণকে যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রে তাদের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক চর্চা যদি থাকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মোকাবিলায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই কিন্তু যথেষ্ট। বিএনপি কিন্তু প্রথম থেকেই জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবহিমিূলক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।
বক্তব্যের শুরুতেই রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সহায়তার জন্য বলা হয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবসহ অন্যদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অবস্থান থেকে আমরা চেষ্টা করছি।
বিএসপিপির আহŸায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব’র মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য দেন গত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন পেশায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মিজানুর রহমান মিনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পেশাজীবীদের মধ্যে বাউবি ভিসি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক এসএম আবদুর রাজ্জাক, পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এসএম সোহাগ আউয়াল, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম, অধ্যক্ষ সেলিম ভ‚ঁইয়া, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, এমএ আজিজসহ সারাদেশের বিভিন্ন পেশার সহস্রাধিক প্রতিনিধি।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জনগণের কাঁধে একটি ফ্যাসিবাদী অপশাসন চেপে বসেছিল। এই শাসনকে সরানোর জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কর্মজীবী, শ্রমজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর, রিক্সা ও ভ্যানচালক, সিএনজিচালিত অটোচালক, ট্রাকের হেলপার বা চালক খেটে খাওয়া সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচার হটাতে রাজপথে নেমে এসেছিল। এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, জুলাই আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করার ব্যাপারে শ্রমজীবী-কর্মজীবী ও পেশাজীবী মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারাই বেশি শহীদ হয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ এবং চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শহীদ ওয়াসিমসহ ৬ জন শহীদ হয়েছিলেন। সেদিন থেকেই কিন্তু মূলত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। ওই ৬ জন শহীদের অন্যতম ছিলেন চট্টগ্রামের ফার্নিচারকর্মী শহীদ ফারুক। তার বিধবা স্ত্রী ও নিষ্পাপ কন্যার একটি বক্তব্য ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে যে, ফারুকের কথা কেউ বলে না। কারণ তার স্বামী ছাত্র ছিলেন না। আমি মনে করি শহীদ ফারুকের স্ত্রীর এই কথার মধ্যেই নিহিত আছে আমাদের প্রচলিত প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কিন্তু কারও একক অবদান নয়। গণঅভ্যুত্থানে সবার অবদান রয়েছে। মানুষ অধিকার আদায়ের জন্যই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, জীবন দিয়েছেন। আজকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিদিন নতুন নতুন দাবি আসছে। কিন্তু আমরা এসব ডামাডোলের মধ্যেই যেন শহীদদের ভুলে না যাই। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে যারা রাষ্ট্র ও সরকারে প্রভাব বজায় রাখতে নানারকম অপকৌশল করছেন তাদের আহŸান জানাই দয়া করে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না।
’৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ ও ২৪ সালে স্বাধীনতা রক্ষার শহীদ কিংবা অন্যান্য সময়ে দেশের জন্য শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শহীদদের নামে করার চিন্তা আমাদের রয়েছে।
প্যানেল মজি